হোম পিছনে ফিরে যান

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?

banglatribune.com 2024/5/19
হাসপাতালে খালেদা জিয়া (ফাইল ফটো)
© 2024 Bangla Tribune Online Media

‘লিভার সিরোসিস, আথ্রাইটিজ, হার্টে রিং পরানো ও ডায়াবেটিস— প্রধানত এই চারটি অসুখে ভুগছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরমধ্যে লিভারের সমস্যা সবচেয়ে বেশি এবং যেকোনও সময় শারীরিকভাবে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে হাসপাতালে আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছেন তিনি।’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছিলেন চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একজন দায়িত্বশীল।

বিএনপি প্রধানের চিকিৎসক টিমের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেনকে উদ্ধৃত করে এই দায়িত্বশীল জানান, লিভারের চিকিৎসায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকেরা কিছু টিপস পুনঃস্থাপন করেছেন, যা সাময়িক। ‘লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট’ই বেগম জিয়াকে শারীরিকভাবে সক্ষম করে তুলতে পারে।

চিকিৎসকেরা বরাবরই বলছেন, লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য খালেদা জিয়াকে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে নেওয়া প্রয়োজন। তবে বরাবরই সরকারের পক্ষ থেকে তা নাকচ করা হয়েছে।

তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিক্যাল টিমের একাধিক দায়িত্বশীল জানান, লিভারের জটিলতা যেকোনও সময় বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করবে। এক্ষেত্রে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দল বা পরিবারের মধ্যে আলোচনা নেই। ‘বিষয়টি স্পর্শকাতর’ বিবেচনা করে সবপক্ষই নিজেদের আলোচনা থেকে দূরে রেখেছে।

‘আলোচনা নেই, তবে মনে আছে’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির সবচেয়ে প্রবীণ নেতা ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘ম্যাডামকে নিয়ে এই আলোচনায়  বিপদ আছে। কমপ্লিকেসি তৈরি হতে পারে। মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা যেতে পারে। তবে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থাকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’

তিনি (খালেদা জিয়া) বিদেশে চিকিৎসা নেবেন নাকি দেশেই নেবেন, তার শারীরিক কন্ডিশন এখন কেমন, বিদেশে নেওয়া ঠিক হবে কিনা— এসব বিষয় আলোচনা করা দরকার। ম্যাডামের জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড, সরকার একটি বোর্ড করতে পারে, তাদের সবাই মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।’ বলে উল্লেখ করেন সাবেক স্পিকার ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির জমির উদ্দিন সরকার।

বিএনপির কোনও কোনও পক্ষ মনে করছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবনতি যেভাবে ঘটছে, তাতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপিতে কোনও আলোচনা নেই। এমনকী তার অনুপস্থিতিতে পরিস্থিতির ব্যবস্থাপনা নিয়েও পরিবার বা দল উভয়পক্ষ নীরব।

‘এক্ষেত্রে দল সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে’ এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন উচ্চপর্যায়ের একাধিক দায়িত্বশীল। তারা মনে করছেন, ‘সরকার যেভাবে চাইবে সেভাবেই এগোতে হবে। এর আগে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর দাফনের জন্য একটি ‘নির্দিষ্ট কবরস্থান’ পারিবারিকভাবে চাওয়া হলেও তাতে সম্মতি মেলেনি।’

এ প্রসঙ্গে জমির উদ্দিন সরকারের মন্তব্য, ‘এসব ভাবছি-ই না।’

স্থায়ী কমিটির এক সিনিয়র সদস্য অবশ্য মনে করছেন, ‘ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ পরিচালনা করছেন, তাতে খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত যেকোনও পরিস্থিতি তারাই নিয়ন্ত্রণ করবে বলে স্পষ্ট।’

বিএনপির যুগপৎসঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘আমি প্রথমত চাইবো, খালেদা জিয়ার শারীরিক এই পরিস্থিতিতে সরকারেরই এখন উচিত উদ্যোগ নিয়ে তাকে দেশের বাইরে যেতে দেওয়া। সরকারের উদ্যোগেই করা দরকার। এখানে যদি তার জীবনাশঙ্কা দেখা দেয়— তাহলে পুরো দায়-দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে। সেটা সরকারের জন্য ভীষণ ভারী হবে।’

খালেদা জিয়া-উত্তর রাজনীতি নিয়ে এক প্রশ্নে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের পর্যবেক্ষণ— নিশ্চয়ই বিএনপির অভিজ্ঞ নেতৃত্বের এসব ব্যাপার নিয়ে সুচিন্তিত ভাবনা-চিন্তা আছে। পরিকল্পনার জায়গাও আছে। একইসঙ্গে চিকিৎসার ব্যাপারে খালেদা জিয়ার কী চিন্তা, এমনকী রাজনৈতিকভাবেও—  সেটি যদি দলের নেতারা জানতে পারেন,  তাহলে সংগঠনের জন্য ইতিবাচক হবে।’

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আদালতের আদেশে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে অসুস্থতা ক্রমাগত বাড়তে থাকে খালেদা জিয়ার। বন্দি থাকা অবস্থায় তিনি দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষ মুক্তি পেয়ে বাসায় ফিরেন যান খালেদা জিয়া।

দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনাভাইরাসের নমুনা টেস্ট রেজাল্ট ‘পজিটিভ’ আসে খালেদা জিয়ার। ২৭ এপ্রিল রাতে তাকে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ২৮ এপ্রিল বিএনপি প্রধানের চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। এরপর ১৯ জুন রাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফেরেন বেগম জিয়া। এরপর থেকে বিগত আড়াই বছর ধরে নিয়মিত এই হাসপাতালেই আসা যাওয়ার মধ্যে রয়েছেন তিনি।

বিএনপি-প্রধানের বাসার একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালে আসা-যাওয়ার বাইরে যে সময়টিতে তিনি বাসায় থাকেন, সেটিও প্রায় মিনি হাসপাতাল। নানা ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জামে ভরপুর তার কক্ষটি। তার মেডিক্যাল টিমের সমন্বয়ক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য মিলিয়ে অন্তত ২৩ জনের মেডিক্যাল টিম কাজ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা বোর্ডে।

সর্বশেষ গত ২ মে এভার কেয়ার থেকে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে বুধবার (১ মে) হাসপাতালে যান তিনি। এর আগে ৩১ মার্চ বিএনপির চেয়ারপারসনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরে ২ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন তিনি।

২ মে হাসপাতাল থেকে ফেরার পর খালেদা জিয়ার চিকিৎসক টিমের সমন্বয়ক ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ক্রনিক লিভার ডিজিজের আপৎকালীন চিকিৎসা চলছে। কিছুটা হলেও সুস্থতার চেষ্টা চলছে। স্থায়ী চিকিৎসা যেটা দরকার, যেটা করলে দীর্ঘ সময় কর্মক্ষম থাকতে পারেন, সেক্ষেত্রে যতদ্রুত দেশের বাইরে তার লিভার রিপ্লেসমেন্ট দরকার।’

People are also reading