হোম পিছনে ফিরে যান

Chopra | চোপড়ার ঘটনায় নিন্দা নাড্ডা-কঙ্কনা রানাউতের, দুঃখপ্রকাশ তৃণমূল বিধায়ক হামিদুলের

uttarbangasambad.com 4 দিন আগে

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ সালিশি সভার নামে তালিবানি অত্যাচারের ঘটনা ঘটল উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায়! বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে যুবক যুবতীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। পাশবিক ঘটনাটি ঘটেছে চোপড়ার(Chopra) লক্ষ্মীপুর গ্রামের দীঘলগাওঁ এলাকায়। সম্প্রতি এক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল(Viral Video) হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, এক যুবক যুবতীকে রাস্তায় ফেলে মারছেন স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা। চারিদিক অনেক মানুষ ভিড় করে রয়েছে। কিন্তু কেউ আটকাচ্ছে না বা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে না। এই ভিডিও ভাইরাল হতেই অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা তাজম্মুল ওরফে জেসিবিকে গ্রেপ্তার করেছে চোপড়া থানার পুলিশ।

এই ঘটনার পরপরই চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমানের বক্তব্য, ‘আমি হোয়াটসঅ্যাপে এই ভিডিও দেখেছি। আমি জেসিবি-দের ডেকে পাঠিয়েছি। শুনতে হবে কী হয়েছিল আসলে। নিগৃহীতা অভিযোগ করলে জেসিবিকে গ্রেপ্তারও করা হবে।’ চোপড়ায় ঘটনায় এ বার দুঃখপ্রকাশ করলেন হামিদুল। সোমবার হামিদুল বলেন, ‘‘যা হয়েছে তা একদমই ঠিক হয়নি। আমি মেনে নিচ্ছি। ওই জায়গায় জাতপাত সংক্রান্ত সমস্যা হলে সালিশি সভা হয়। একে আমি বা আমার দল একদমই সমর্থন করি না। আমার নামে অপপ্রচার হচ্ছে যে, আমি নাকি বলেছি, ‘মুসলিম রাষ্ট্রে এই ধরনের ঘটনা ঘটে’। আমি ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ কথা মুখেই আনিনি। বিরোধীরা আমার নামে অপপ্রচার করছে। আমার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে।’’

অন্য দিকে, চোপড়ার ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই আসরে নেমেছেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা এবং সাংসদ কঙ্গনা রানাউত এই ঘটনার সমালোচনা করেছেন। সমালোচনা করেছেন বালুরঘাটের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও।

উল্লেখ্য, আক্রান্ত যুবতী বিবাহিতা। তিনি এক যুবকের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেই খবর চাউর হতেই সালিশি সভার আয়োজন করেন ওই তৃণমূল নেতা। ওই নেতা এলাকায় ‘জেসিবি’ নামে পরিচিত। সেই সালিশি সভার মাঝেই রাস্তায় ফেলে লাঠি দিয়ে যুবক যুবতীকে বেধড়ক মারধর করে সে। নৃশংস অত্যাচারের পর আক্রান্তরা হাসপাতালেও যেতে পারেননি বলে জানা গিয়েছে। এদিকে জেসিবির ভয়ে এলাকার প্রত্যেকেই মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই শোরগোল পড়ে যায়। ভিডিওটি প্রথম প্রকাশ্যে আনেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম। পরে ভিডিওটি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। ইসলামপুরের পুলিশ সুপার জবি থমাস জানান, তদন্তে তাঁরা জানতে পেরেছেন, ঘটনাটি দুদিন আগের।  ঘটেছিল লক্ষ্মীপুর গ্রামের দীঘলগাওঁ এলাকায়। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা জেসিবির বিরুদ্ধে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম ভিডিয়োটি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘‘সালিশি সভাও নয়। অপরাধের বিচার এবং শাস্তি দিচ্ছে তৃণমূলের পোষা গুন্ডা। যার ডাকনাম জেসিবি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে এ ভাবেই বিচার ব্যবস্থাকে দুরমুশ করা হচ্ছে চোপড়ায়।’’ পরে একই ভিডিয়ো পোস্ট করে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য লেখেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে থাকা বাংলার কুৎসিত মুখ।… প্রত্যেক গ্রামেই সন্দেশখালি রয়েছে।’’

বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গরে একটি ভয়ঙ্কর ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে, যা বর্বরতার কথা মনে করিয়ে দেয়। আরও খারাপ লাগছে যে তৃণমূলের বিধায়ক এবং ক্যাডারেরা বিষয়টিকে মান্যতা দিচ্ছেন। সন্দেশখালি হোক, উত্তর দিনাজপুর হোক বা অন্য কোনও জায়গা, দিদির পশ্চিমবঙ্গ মহিলাদের জন্য নিরাপদ নয়।’’

বিরোধীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘চোপড়ায় যে ঘটনা ঘটেছে তা তৃণমূল বা আমাদের সরকার কোনও ভাবে সমর্থন করে না। এটা আমরা বার বার বলেছি। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে। মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্যাতিতদের পুলিশি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। আরও যদি কেউ এই ঘটনায় জড়িত থাকেন, তাঁরাও পার পাবেন না। তবে তফাত অন্য জায়গায়। ৩৪ বছরের বাম শাসনে বাংলায় এ রকম অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনও বাম নেতাকে প্রকাশ্যে এসে নিন্দা করতে শুনিনি বা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে দেখিনি। দেশে বিজেপি শাসিত বহু রাজ্যেও এই ধরনের ঘটনা হামেশাই ঘটে। কিন্তু তা নিয়ে পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করছে বা বিজেপি নেতা বিরোধিতা করছেন, তেমনটা ওই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে দেখা যায় না। এটা একমাত্র বাংলাতেই সম্ভব।  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই ধরনের ঘটনায় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি রেখেছেন। শুধু মুখে বলা হয় না, কাজেও করে দেখানো হয়।’’

People are also reading