হোম পিছনে ফিরে যান

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

channelionline.com 6 দিন আগে

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পরপরই এবার আগ্রহ তৈরি হয়েছে তার চীন সফর নিয়ে। আগামী ৮ থেকে ১১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের চীন সফরে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন পর দ্বিপক্ষীয় এ সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কমপক্ষে ১০টি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরের ঠিক আগে চীনের ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও ঢাকা সফর করছেন। গত সোমবার (২৪ জুন) তার সাথে বৈঠক করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, ৮ থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সম্ভাবনা বেশি।

এই সফরে যুগান্তকারী বাণিজ্য চুক্তি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও প্রায় ৭০০ কোটি ডলার সমপরিমাণের একটি ঋণ চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আলোচনা চলছে আরও বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়েও। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের দিকে নজর রাখছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রও।

নজর রাখছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র:
গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে অনুষ্ঠিত ভারত সফরের উপর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত এবং চীনের সঙ্গে সমান্তরাল সম্পর্ক বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মৌলনীতিরই অংশ। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতির মূল বিষয় ছিল সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়। আর তিনি সেই নীতি অনুসরণ করে চলেছেন।

তিনি এটাও বলেন যে, ভারতের সঙ্গে চীনের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক এটি ওই দুই দেশের বিষয়, এটি বাংলাদেশের বিষয় নয়। কাজেই বাংলাদেশ চীন এবং ভারতের সঙ্গে সমান্তরালভাবে স্বাভাবিক সম্পর্ক রেখে চলবে।

সুতরাং ভারতের সঙ্গে চীনের খারাপ সম্পর্কের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের দিকে তাকিয়ে থাকবে ভারত। এই সফরের বিভিন্ন চুক্তি এবং সম্পর্কের উপরও নজর রাখবে দেশটি। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময় চীনের বিষয় নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে বলে জানা যায়নি।

তবে কোন কোন ভারতীয় গণমাধ্যমের ধারণা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব জানার চেষ্টা করেছেন। তবে এর কোন প্রভাব বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে পড়েছে বলে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে না।

আবার, চীনের উপর ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক নির্ভরতায় যুক্তরাষ্ট্র এই সফরের দিকে তাকিয়ে থাকবে, এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কারণ এই অঞ্চলে এখন চীনের একাধিপত্য প্রায় প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং নেপালের মতো দেশগুলো চীনের সঙ্গে অনেক ঘনিষ্ঠ হয়েছে এবং সেখানে মার্কিন প্রভাব বলয় প্রায় নিঃশেষিত। এই বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক বিষয়ের বাইরে রাজনৈতিক কোন মেরুকরণ হয় কি না সেটি দেখার অপেক্ষায় আছে কূটনৈতিক মহল।

চীনা মন্ত্রীর সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যত আলোচনা
প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রস্তুতি হিসেবে ঢাকায় আসা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাওয়ের সাথে নানান ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এ বৈঠকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

হাছান মাহমুদ বলেন, রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মিয়ানমারকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য চীনকে বলেছি আমরা, যাতে তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনটা শুরু করে। তিনি বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিয়েছেন এবং তাদের ক্যাপাসিটিতে যতটুকু করা সম্ভব, সে অনুযায়ী সহায়তা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।

এসময় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর আলোচনায় বাংলাদেশ থেকে চীনকে ওষুধ, সিরামিক ও চামড়াজাত পণ্য আমদানি করার কথাও বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার বিষয়ে আলাপ করেছি। আমরা চীনে রপ্তানি করি ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, আমদানি করি ১৩ বিলিয়ন ডলার। এ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা করেছি।

এছাড়াও যেকোন উপায়ে ব্রিকসের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা তৈরির বিষয়ে বৈঠকে চীনের সহায়তা কামনার কথা বলেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ব্রিকসের যেকোন ফরম্যাটে যাতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি হয়, সেটি সদস্য দেশ বা অংশীদার দেশ, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সিদ্ধান্তে যাই হোক না কেন- এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদের সমর্থন-সহায়তা কামনা করেছি।

চীন সফরে প্রধানমন্ত্রীর সম্ভব্য সূচি
চার দিনের সফরের দ্বিতীয় দিন ৯ জুলাই দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও লি ছিয়াংয়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। পরদিন ১০ জুলাই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হবে শেখ হাসিনার। একই দিন চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস অব চায়নার প্রেসিডেন্ট ঝাও লেজির সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে প্রধানমন্ত্রীর। এছাড়া চীনের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠকের আয়োজন থাকবে সফরে।

কর্মকর্তারা জানান, বাণিজ্য ও অর্থনীতিই হবে এবারের সফরের অগ্রাধিকার। ইতোমধ্যেই ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চীনের কাছ থেকে বাণিজ্য সহায়তা ও বাজেট সহায়তার আওতায় ঋণ, বিনিয়োগ সুরক্ষা, ডিজিটাল অর্থনীতি, ব্লু ইকোনমি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সমীক্ষার ঘোষণা ও একাধিক সেতু নির্মাণ ও সংস্কার ইত্যাদি প্রসঙ্গ রয়েছে।

আলোচনা চলছে বাংলাদেশের জন্য চীনের ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ঋণ নিয়ে। এর মধ্যে বাণিজ্য সহায়তার আওতায় ৫০০ কোটি ডলার ও বাজেট সহায়তার আওতায় ২০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ চীনা মুদ্রায় বাংলাদেশকে ঋণ দেবে চীন।

মূল সফরটি দুই দিনের
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরটি চারি দিনের বলা হলেও মূল সফরটি হচ্ছে দুই দিনের। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগামী ৮ থেকে ১১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরের কথা রয়েছে। তবে সফরের মূল কর্মসূচি ৯ ও ১০ জুলাই সীমিত থাকবে।

৯ জুলাই দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। ১০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এ সফরের সময় চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস অব চায়নার প্রেসিডেন্ট ঝাও লেজির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গত ১০ বছরে চারবার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। ২০১৪ সালে বেইজিংয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় সফর, ২০১৬ সালে শি জিন পিংয়ের ঢাকা সফর, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আবার বেইজিং সফর এবং ২০২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে তাদের মধ্যে বৈঠক হয়। আর এবার চার দিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে বেইজিং যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

People are also reading