হোম পিছনে ফিরে যান

লড়াই হবে ত্রিমুখী

comillarkagoj.com 2024/11/1

 লড়াই হবে ত্রিমুখী

২১ মে অনুষ্ঠিতব্য কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে পুরো নির্বাচনি এলাকায়। বহিরাগতদের আনাগোণা আর সংসদ সদস্যদের প্রভাব বিস্তার নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। ভোট গ্রহণের দিন কেন্দ্রের পরিবেশ এবং নির্বিঘেœ ভোটার আসা নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করছেন তারা। তাদের দাবি, নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নিরপেক্ষ কঠোর ভূমিকা থাকলে একটি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন সম্ভব হবে। এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কাপ-পিরিচ প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার, হেলিকপ্টার প্রতীকে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাবলু এবং আনারস প্রতীকে ইঞ্জিনিয়ার আখতারুজ্জামান রিপন। তিনজনই আওয়ামীলীগ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এছাড়াও সাতজন ভাইস চেয়ারম্যান ও তিনজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
উপজেলার ৫৫ টি কেন্দ্রে আগামী ২১ শে মে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৮৬৮ জন ভোটার এই উপজেলায়। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৯ হাজার ৭০৬ জন ৬৪ হাজার ১৬০ জন। হিজড়া ভোটার আছে দুজন।
উপজেলার সাতটি ইউনিয়নেই আলাদা আলাদা প্রভাব রয়েছে। আঞ্চলিকতার প্রভাবে ভোট ভাগাভাগি হবে ৩ প্রার্থীর মধ্যেই। এছাড়া রাজনৈতিক সাংগঠনিক গুরুত্ব ও আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে ভোট ভাগাভাগি নিয়েও রয়েছে সমীকরণ। তাই ভোটাররা বলছেন ভোট হলে কোথাও একতরফা নির্বাচনের তেমন কোন সম্ভাবনা নেই।
সদর দক্ষিণ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লড়াই হবে ত্রিমুখী। বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপির ভাই গোলাম সারোয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি। দীর্ঘদিন এই উপজেলার আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো তাঁর পরিবারের নিয়ন্ত্রনে থাকায় রাজনৈতিক সাংগঠনিক ভাবে এগিয়ে আছেন তিনি। তবে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাই বাবলু এগিয়ে আছেন সামাজিক ও গণযোগাযোগে। দীর্ঘ সময় নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ায় উপজেলার বেশির ভাগ জনগণের কাছেই তিনি সশরীরে ভোট চাইতে গিয়েছেন। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সুপ্রভাবও পড়বে এই ভোটের লড়াইয়ে। এছাড়া কুমিল্লা মহানগর ঘেঁষা নির্বাচনি এলাকায় হেলিকপ্টার মার্কার আধিপত্য বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে দুই পুরোনো নেতার লড়াইয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন বলে নিজেকে দাবি করছেন নতুন মুখ ইঞ্জিনিয়ার আক্তারুজ্জামান রিপন। আনারস প্রতীকের ইঞ্জিনিয়ার রিপন সামাজিক কর্মকান্ড দিয়ে এলাকায় সুপরিচিত। তার নিজের ইউনিয়ন গলিয়ারা উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের ভোটারদের পূর্ন সমর্থন পাবেন বলে তার দাবি। জানা গেছে, আওয়ামীলীগের বাইরের ভোটাররাও রিপনের পক্ষে সমর্থন দেয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া সারোয়ার - বাবলুর দ্বন্ধের প্রভাবে ভোটাররা তাকেই ভোট দিবেন বলে তার প্রত্যাশা।
কাপ- পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী গোলাম সারোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, এমন কোন আমার নেতা নেই যে ধমক খায়নি। আমার নেতা কর্মীদের নিকট আত্মীয়দের মাধ্যমে তাদেরকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়। প্রত্যেকটি লোককে মানসিক এবং শারীরিকভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে। ২২ তারিখের পরে শহরে আসলে দেখে নেয়া হবে বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এজন্য কেউ প্রকাশ্যে আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। মানুষের মনে আতঙ্ক থাকলে ভোটার উপস্থিতি কম থাকবে। আমরা আতংক দূর করতে পারলেই অনেক ভোটার উপস্থিতি হবে।
সদর আসনের সংসদ সদস্যের নাম করে ধমকানো হচ্ছে নেতাকর্মীদের এমন স্পর্শকাতর অভিযোগ করেছেন তাতেই গোলাম সারোয়ার।
হেলিকপ্টার প্রতীকের প্রার্থী আবদুল হাই বাবলু বলেন, এখন ভোট হবে, আমার দিকে ভোটারদের স্রোত দেখে -আমার প্রতিপক্ষের দল আবোল-তাবোল বলছে। তারা সিল মারতে পারবে না, ভোট ডাকাতি করতে পারবে না, কেন্দ্র দখল করতে পারবে না- এই জ্বালায় তারা এখন পাগলের মতো আবোল তাবোল বলছে। আমি বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য এমপি মন্ত্রী স্বজনদের নিষেধ দিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞ অমান্য করে অনেকে আজকে নির্বাচন করছেন জনগণ নেত্রীর সাথে একমত হয়ে ভোটের মাধ্যমে তাদেরকে ইনশাআল্লাহ জবাব দেবে।
আনারস প্রতীকের আক্তারুজ্জামান রিপন বলেন,ভোটারদের প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কেন্দ্রে যেতে পারব কিনা? কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে পারব কিনা? কেন্দ্রীয় প্রবেশ করে আমরা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারব কিনা? এই জবাব দিতে দিতে আমার দিন শেষ। তাই আমি প্রশাসন কে বলেছিলাম আপনাদের উদ্যোগে কিছু মূলক প্রোগ্রাম করেন। সাধারণ মানুষকে নিশ্চিত করেন যে আপনারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবেন।
সংসদ সদস্যদের প্রভাব বিস্তার ও বহিরাগতদের আধিপত্যের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব বিষয়ে কেউ বড় ধরনের অভিযোগ করেন নি। নির্বাচনি এলাকায় আচরণবিধি ও আইনশৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্র্যাট নিয়োজিত রয়েছেন। তারা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবেন। এখনও নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রয়েছে। আমরা একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য সর্বোচ্চ সচেষ্ট আছি।
তিনি আরো জানান, আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা তাদের কর্মী সমর্থক নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন। এটি সুস্থ নির্বাচনের জন্য একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
ইতোমধ্যে নির্বাচনী পরিবেশে বিশৃঙ্খলা ঘটনার অভিযোগ কাপ- পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী গোলাম সারোয়ারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তলদেশ পেয়েছেন হেলিকপ্টার প্রতিকার প্রার্থী আব্দুল হাই বাবলু।