হোম পিছনে ফিরে যান

প্রীতির জোড়া গোলে নাসরিনকে রুখে দিল এআরবিসি

dailyjanakantha.com 2024/11/11
প্রীতির জোড়া গোলে নাসরিনকে রুখে দিল এআরবিসি
নারী ফুটবল লিগে তারকাদের দল

নারী ফুটবল লিগে এবার শক্তিশালী দল মূলত তিনটি। নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি, আতাউর রহমান ভুঁইয়া কলেজ (এআরবিসি) স্পোর্টিং ক্লাব এবং বাংলাদেশ আর্মি স্পোর্টস ক্লাব। এবারের লিগে এই দলগুলো পরস্পরের বিপক্ষে খেললে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ-আকর্ষণীয় ম্যাচের সংখ্যা হয় তিনটি। যার একটি লিগের উদ্বোধনী ম্যাচটিই ছিল (আর্মি বনাম এআরবিসি)। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বৃহস্পতিবার।

ঢাকার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মো. মুস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জমজমাট এই ম্যাচে এআরবিসি মুখোমুখি হয় নাসরিনের। জাতীয় দলের ১৫ ফুটবলার খেলেন বলে নাসরিন এই লিগের টপ ফেভারিট দল। কিন্তু এই ফেভারিট দলকেই কি না দারুণভাবে রুখে দিল এআরবিসি। তারা ২-২ গোলে ড্র করে। এআরবিসির ‘ড্র সম’ জয়ের নায়ক দলটির ফরোয়ার্ড সৌরভী আকন্দ প্রীতি।

তিনি একাই করেন জোড়া গোল। অপরদিকে নাসরিনের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকার। তিনি এক গোলের পাশাপাশি একটি গোলে সহায়তাও করেন। নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে এটা নাসরিনের প্রথম ড্র। আগের চার জয়ে তাদের সংগ্রহ ১৩ পয়েন্ট। যথারীতি পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষেই আছে তারা। পক্ষান্তরে ষষ্ঠ ম্যাচে এটা গদ দুই লিগের রানার্সআপ এআরবিসিরও প্রথম ড্র। চার জয় ও ১ হারে (একমাত্র হারটি ছিল আর্মির বিরুদ্ধে) তাদের পয়েন্টও ১৩।

তবে ম্যাচ বেশি খেলায় তাদের অবস্থান পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয়। দুদলের শক্তির তারতম্য কম থাকায় যেমনটা অনুমান করা হয়েছিল বৃহস্পতিবারের ম্যাচটি তেমনই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। দুদলই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ করে খেলে। গোলের একাধিক সুযোগও পায়। তবে এক্ষেত্রে আক্রমণ করার ক্ষেত্রে নাসরিনই এগিয়েছিল। 
ম্যাচ শেষে এআরবিসি তাদের চেয়ে কিছুটা শক্তিমত্তায় এগিয়ে থাকা নাসরিনকে রুখে দিয়েও সেভাবে আনন্দ উদযাপন করতে পারেনি। কেননা তাদের অন্যতম ফরোয়ার্ড মোসাম্মৎ সাগরিকাকে নিকটস্থ মুগদা জেনারেল হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স করে নেওয়া হয়। এআরবিসির কোচ গোলাম রায়হান বাপন জানান, ‘সাগরিকার বুকে তীব্র ব্যথা। কিন্তু সেটা ম্যাচে খেলে পায়নি। এই সমস্যা তার আগে থেকেই ছিল। ওকে মুগদা হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য।’  
ম্যাচের মাত্র ৪২ সেকেন্ডেই (১ মিনিট) গোল করে লিড নেয় এআরবিসি। নাসরিনের গোলরক্ষক রূপনা চাকমার ভুলে এগিয়ে যায় তারা। রূপনা বল বিপন্মুক্ত করতে গিয়ে ভজঘট পাকিয়ে বসেন। বল মেরে বসেন বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়া এআরবিসির ফরোয়ার্ড সৌরভী আকন্দ প্রীতির গায়ে। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডান পায়ের দর্শনীয় শটে বল জালে জড়িয়ে দেন প্রীতি (১-০)।  ৫ মিনিটেই সমতায় ফেরে নাসরিন।

সতীর্থ অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের সঙ্গে চমৎকারভাবে বল আদান-প্রদান করতে করতে বক্সে ঢুকে পড়েন ঋতুপর্ণা চাকমা। তিনি যে ক্রসটি করেন, তা ধরে চমৎকারভাবে ডান পায়ে ফিনিশ করেন আরেক ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকার। তখন গোলপোস্ট ছিল একেবারেই ফাঁকা। ফলে গোল করতে কোন সমস্যাই হয়নি কৃষ্ণার (১-১)। ২১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে নাসরিন।

কৃষ্ণা অসাধারণ ও ‘চোরা’ থ্রু পাস দেন প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে। সেখান থেকে বল পেয়ে ডিফেন্ডারদের গতির দৌড়ে পেছনে ফেলে এগিয়ে যান সাবিনা। বক্সের মাথা থেকে চমৎকার ডান পায়ের প্লেসিং শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি (২-১)।
৬৩ মিনিটে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে নাসরিন। কর্নার পায় তারা। সাবিনার উড়ন্ত কর্নার থেকে বক্সের ভেতরে লাফিয়ে হেড করেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। বল পোস্টের ভেতরে ঢোকার ঠিক আগ মুহূর্তে সেই বল অসাধারণ দক্ষতায় সেভ করেন এআরবিসির গোলরক্ষক সাথী বিশ^াস। ৬৯ মিনিটে আরেকটি গোলের সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি নাসরিন। বা প্রান্তে বল পান ঋতুপর্ণা।

তিনি লক্ষ্য করেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক পোস্ট ছেড়ে বক্সের বাইরে অবস্থান করছেন। দেরি না করে ঋতুপর্ণা বা পায়ের জোরালো গড়ানো শট নেন ফাঁকা পোস্ট লক্ষ্য করে। বিপদ বুঝে বলের পিছু ধাওয়া করেন গোলরক্ষক। কিন্তু বলের গতির সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। তবে কোনো বিপদ হয়নি। কেননা বল চলে যায় পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে।

৭৪ মিনিটে বল নিয়ে বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন নাসরিনের শামসুন্নাহার। ততক্ষণে বিপদ বুঝে সামনে এগিয়ে এসেছেন এআরবিসির গোলরক্ষক সাথী। শামসুন্নাহার ডান পায়ের গড়ানো শটটি সাথীর গায়ে লেগে কর্নার হলে বেঁচে যায় এআরবিসি। ৮৫ মিনিটে সমতায় ফেরে এআরবিসি। চমৎকার বোঝাপড়া ও সংঘবদ্ধ একটি আক্রমণ করে তারা। তহুরা থেকে পাস পান রিপা। 
রিপার চমৎকার থ্রু পাস ধরে বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন সৌরভী। প্রতিপক্ষ আগুয়ান গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে ডান পায়ের টোকা দিয়ে বল জালে পাঠান সৌরভী (২-২)। সংযুক্তি সময়ে এআরবিসির সাগরিকা বক্সের ভেতরে শট নিলে তা অল্পের জন্য লক্ষ্যভষ্ট হয়। এক মিনিট পরেই নাসরিন কর্নার পায়। মারিয়ার কর্নারে মাসুরার চমৎকার হেড অল্পের জন্য গোল হয়নি শাহেদা আক্তার রিপার দক্ষতায়। গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করেন তিনি। বাকি সময়ে দুদল আর কোনো গোল করতে পারেনি। চমৎকারভাবে ম্যাচ পরিচালনা করা রেফারি সালমা আক্তার মনি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়ে উভয় দল।