হোম পিছনে ফিরে যান

বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহারের শঙ্কা

prothomalo.com 5 দিন আগে

বেজার কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সুবিধা প্রত্যাহার করা হলে বেশ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক বাংলাদেশে আর বিনিয়োগ করবেন না বলে জানিয়েছেন। একই আশঙ্কায় দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রায় ১৫ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ ফিরে যেতে পারে। একই চিত্র সিটি গ্রুপেও। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে আসা কয়েকটি কোম্পানির মালিকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান সুবিধাগুলো না থাকলে তাঁরা এ দেশে বিনিয়োগের বিষয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করবেন।

উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত অনেকটা ‘গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়ার’ মতো। এতে দেশ থেকে বিদেশি বিনিয়োগ ফিরে যাবে। পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগ আসার পথও রুদ্ধ হবে। তাঁরা বলেন, শিল্পায়নের জন্য দরকার নীতির ধারাবাহিকতা। সেটি না থাকলে কেউ বিনিয়োগে আস্থা পাবেন না।

বেসরকারি সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কর বাবদ কিছু বাড়তি টাকা পেতে সরকার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এই সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যমান সুবিধা অব্যাহত রাখতে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে দেখা করেছেন উদ্যোক্তারা। অন্যদিকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুনও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন সংগঠন বিদ্যমান সুবিধা অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে। এদিকে আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সরকারের শীর্ষ মহলে এ নিয়ে আলোচনা ও নতুন সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

এনবিআরের যুক্তি হচ্ছে, সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের চেয়ে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের প্রবণতা বেশি। এ জন্য সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তা ছাড়া শুল্ক অব্যাহতির অপব্যবহার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেশ কিছু খাতে দুই বছর ধরে পর্যায়ক্রমে কর অব্যাহতি কমিয়ে আসছে এনবিআর।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ইজেড ও হাইটেক পার্কগুলো সম্মিলিতভাবে প্রায় ৪ হাজার ২২ কোটি টাকার কর অব্যাহতি পেয়েছে।

অন্যদিকে বেজার তথ্য হচ্ছে, গত তিন বছরে এসব সুবিধা দেওয়ায় সরকার ৫০০ কোটি টাকার কম রাজস্ব হারিয়েছে।

গত ২৯ মে এক প্রজ্ঞাপনে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে আটটি সুবিধা প্রত্যাহারের কথা জানায় এনবিআর। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মূলধনি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য পণ্য আমদানিতে এত দিন শুল্ক অব্যাহতিসহ নানা সুবিধা ছিল। প্রস্তাবিত ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূলধনি যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও নির্মাণ উপকরণ আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।

এত দিন সব ধরনের অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আয়কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এবার সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল ছাড়া অন্য সব অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর আয়কর আরোপ করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক অঞ্চলের (ইজেড) উন্নয়নকাজে ব্যবহার করা পণ্য আমদানিতেও এত বছর শুল্ক অব্যাহতি ছিল। সে ক্ষেত্রে নতুন বাজেটে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ইজেডে স্থাপিত ওয়্যারহাউসের অনুকূলে এত দিন দেওয়া বন্ড সুবিধাও বাতিল করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে নিয়োজিত বিদেশি কর্মীদের প্রথম তিন বছরের আয়ের ওপর ৫০ শতাংশ আয়কর অব্যাহতি ছিল। সেটি বাতিল করা হয়েছে।

বেজার কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই এনবিআর ইজেডের সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাতে এনবিআর দুটি আইন ভঙ্গ করেছে। প্রথমত, কাস্টমস আইনের ২৬২ নম্বর ধারায় বলা আছে, আইন ও বিধি বাস্তবায়ন–সম্পর্কিত বিষয়ে সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি খাতের কাছ থেকে নিয়মিত পরামর্শ নেবে। দ্বিতীয়ত, ইজেডে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীদের কী কী সুবিধা দেওয়া হবে, তা বেজার আইনের ১০, ১১ ও ১৩ নম্বর ধারায় স্পষ্ট করে বলা আছে।  

জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন গতকাল তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো নীতির ধারাবাহিকতা থাকা দরকার। নতুন সিদ্ধান্তে বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিদেশিরা উদ্বেগ জানাচ্ছেন। অনেক দেশীয় উদ্যোক্তার মধ্যেও আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের ক্ষতি হচ্ছে।  

বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশন সরকারের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে। অর্থমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে তারা বলেছে, অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর অবকাশ, শুল্ক অব্যাহতিসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার আশায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে। মাঝপথে হঠাৎ করে এভাবে শুল্ক আরোপ হলে বিনিয়োগকারীরা আস্থার সংকটে পড়বেন। বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবেন।

চিঠিতে বলা হয়, সরকারের কাছ থেকে এসব সুবিধা না পেলে পাইপলাইনে থাকা বিদেশি উদ্যোক্তারা তাঁদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করবেন, যা দেশের শিল্পায়নে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর বিভিন্ন ধরনের কর আরোপের প্রস্তাবগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।  

এ প্রসঙ্গে বাজেট–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘আমরা কোনো জায়গায় আর শূন্য শুল্ক দেখতে চাই না।’

সরকার সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে চায়। তাতে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান ও অতিরিক্ত চার হাজার কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি আশা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

তবে সর্বশেষ তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৪২০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে ৫৩ হাজার মানুষের।

People are also reading