বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
ভারত থেকে আলু আমদানি করে এনে রেখেছেন গুদামে। তবে গত কয়েকদিন ধরে বয়ে চলা তাপপ্রবাহে পচন ধরেছে আলুতে। এতে বিপাকে পড়েছেন দিনাজপুর হাকিমপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ আলু ফেলে দিতে হচ্ছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। এদিকে পচা আলুর দুর্গন্ধে বিপাকে পড়েছেন আশপাশের মানুষ।
সারা দেশের মতো দিনাজপুরের হিলিতেও বইছে তাপপ্রবাহ। গত তিন দিন ধরেই তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। গরমের কারণে ভারত থেকে আমদানি করা আলু গুদামে রেখে বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকরা। তুলনামূলক দাম বেশি ও ক্রেতা সংকটের কারণে আলু বিক্রি হচ্ছে না। এই ফাঁকে তীব্র গরমের কারণে আলু পচে নষ্ট হওয়ায় ফেলে দিতে হচ্ছে।
আলুর গুদাম রহিম ট্রেডার্সের ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের বাজারে আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত থেকে আলু আমদানি করছেন আমদানিকারকরা। ভারতে দাম কিছুটা কম থাকায় ও দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় লাভের আশায় আলু আমদানি করা হচ্ছে। তবে আমদানি করা আলুর দাম এখনও কিছুটা বেশি হওয়ায় তেমন একটা বিক্রি হচ্ছে না। পাইকাররা ঠিকমতো আসছেন না। যার কারণে বন্দরে বিক্রি না হওয়ায় খালাস করে আমদানিকারকদের নিজস্ব গুদামে রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে যে গরম পড়েছে, এতে আলু পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে- যা আমাদের ফেলে দিতে হচ্ছে। প্রতিটি বস্তা থেকে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কেজি করে পচা আলু বের হচ্ছে। আবার শ্রমিক লাগিয়ে খারাপগুলো আলাদা করতে হচ্ছে। বাছাইয়েও বাড়তি খরচ হচ্ছে। এর ফলে আমদানিকারকরা লোকসানের মুখে পড়ছেন।’
এম আর ট্রেডার্সের ম্যানেজার রতন সরকার বলেন, ‘বন্দরে প্রতি কেজি কাটিনাল জাতের আলু পাইকারিতে প্রকারভেদে ৩৭ থেকে ৩৯ টাকা বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু গুদামে আলু রাখায় পচে নষ্ট হওয়ায় প্রতিদিন বস্তা বস্তা আলু ফেলে দিতে হচ্ছে। শুধু গুদামে নষ্ট হচ্ছে তা নয়। ভারত থেকে আনার সময়ও ট্রাকেই নষ্ট হচ্ছে ২-৩ টন করে। এতে এবার আলু আমদানি করে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।’
গুদামের পার্শ্ববর্তী দোকানি ইয়াসিন আলী বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে আলুর গন্ধের কারণে দোকানে বসা যাচ্ছে না। প্রচণ্ড গরমের কারণে গুদামে প্রতিদিনই আলু পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে- যা ফেলে দিতে হচ্ছে।’
আলু বাছাই কাজে নিয়োজিত রাহেলা বেওয়া বলেন, ‘গুদামে আলু পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা ওই সব গুদামে আলু বাছাইয়ের কাজ করছি। বস্তা থেকে আলু ঢেলে পচা আলুগুলো বাছাই করে আলাদা করছি। ভালোগুলো রাখছি। সারাদিন এই কাজ করে আমারা মজুরি পাই ২০০ টাকা।’
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আলু আমদানি অব্যাহত রয়েছে। আলু যেহেতু কাঁচাপণ্য ও দ্রুত পচনশীল তাই কাস্টমসের প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত যেন খালাস করে নিতে পারে সেজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছে।’
আবহাওয়া অধিদফতর দিনাজপুরের ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে দিনাজপুর অঞ্চলে তাপমাত্রা ৩৯ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বিরাজ করছে। আগামী আরও কয়েকদিন এমন তাপমাত্রা থাকবে। মূলত বাতাসের আর্দ্রতা অর্থাৎ জলীয় বাষ্পের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি হওয়ায় এবং বাতাসের গতিবেগ কিছুটা কম থাকার কারণে গরম কিছুটা বেশি অনুভূত হচ্ছে।’