হোম পিছনে ফিরে যান

উত্তরপ্রদেশে ভরাডুবির পিছনে ১২ কারণ! ৪০টি সমীক্ষক দলের রিপোর্ট গেরুয়া শিবিরকে

sangbadpratidin.in 3 দিন আগে

উত্তরপ্রদেশের অধিকাংশ আসনেই দলের প্রাপ্ত ভোট গতবারের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ কমে গিয়েছে।

Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.

বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: মহারাষ্ট্র, রাজস্থান বা হরিয়ানার পাশাপাশি গেরুয়া শিবিরকে সবচেয়ে অস্বস্তিতে ফেলেছে উত্তরপ্রদেশের ফলাফল। গতবার ৮০ আসনের মধ্যে ৬২ আসন ঝুলিতে ভরেছিল বিজেপি। এবার এক ঝটকায় নেমে এসেছে ৩৩-এ। তাতেই চিন্তার ভাঁজ গভীর হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi), অমিত শাহ বা রাজনাথ সিংদের। তাই ফলাফল সামনে আসতেই যোগী রাজ্যে ভরাডুবির কারণ খুঁজতে ময়দানে নামান হয় সমীক্ষক দল। সূত্রের খবর, ৭৮টি আসনে গড়ে ৫০০ কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে যে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে তা দেখে চোখ কপালে উঠেছে গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ কর্তাদের। ভরাডুবির পিছনে ১২টি কারণ কাজ করেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দির (Ram Mandir) নির্মাণ ও রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই হিন্দি বলয়ে টগবগ করে ফুটছিল গেরুয়া শিবির। মনে করা হয়েছিল, রামলালা একাই মোদির ৪০০ পাড়ের ডাক উতরে দেবেন। কিন্তু সেই হিন্দি বলয়ের কয়েকটি রাজ্যে কার্যত ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেতে হয়েছে সেই রাজ্যে যেখানে ভোটের চার মাস আগে ধুমধাম করে রামমন্দির উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু মন্দির নির্মাণের পর যত দিন গিয়েছে ততই গেরুয়া শিবিরের পাশ থেকে একটু একটু করে সরে গিয়েছেন রামলালা। মন্দির হাওয়া কোনও কাজেই আসেনি। এমনকী, অযোধ্যা আসনেও পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছে। হারতে হয়েছে এলাহাবাদ বা সুলতানপুরের মতো আসনে যেখানে রামচন্দ্রের অস্তিত্ব ছিল বলে রামায়নে উল্লেখ করা হয়। ফলে যোগী রাজ্যে ভরাডুবির কারণ খুঁজতে ৪০টি সমীক্ষক দলকে নিয়োগ করে বিজেপি। দলের সদস্যরা গত ২০দিন ধরে সমীক্ষা চালায়। প্রায় ৪০ হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলে হারের কারণ খোঁজার চেষ্টা চালায়। গত মঙ্গলবার সমীক্ষক দলের রিপোর্ট জমা দেওয়া হয় সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা (JP Nadda) ও সাধারণ সম্পাদক সংগঠন বি এল সন্তোষের কাছে।

জানা গিয়েছে, রিপোর্টে সব আসনেই দলের প্রাপ্ত ভোট গতবারের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ কমে গিয়েছে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, কানপুর-বুন্দেলখন্ড, অবধ, কাশী, ও গোরক্ষপুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভোট কমেছে। এই ভোট গিয়েছে সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস জোটের ঝুলিতে। বিশেষ করে দলিত, পিছিয়ে পড়া ও সংখ্যালঘুদের ভোট টেনেছে জোট। ওবিসি, নন যাদব ওবিসি, তফসিলি মানুষের মন কেড়ে নিয়েছে অখিলেশ যাদব ও রাহুল গান্ধীরা (Rahul Gandhi)। সূত্রের খবর, রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে সংবিধান সংশোধন ইস্যু পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষের মনে ভয়ের সঞ্চার করেছিল।

এছাড়াও ১২ টি কারণ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত, সংবিধান সংশোধন নিয়ে বিজেপি নেতাদের কড়া মন্তব্য ও বিরোধী জোট নেতাদের মধ্যে তরজা জোটকে এগিয়ে দিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস শিক্ষিত বেকারদের প্রভাবিত করেছে। তৃতীয়ত, সরকারি কাজে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ। চতুর্থত, সরকারি কর্মীদের নিয়ে দলের কর্মীদের মধ্যেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এছাড়াও রিপোর্টে লেখা হয়েছে, সরকারি আধিকারিকদের কাছ থেকে বিজেপি কর্মীরা কোনওরকম সহযোগিতা পায়নি। দলের সমর্থক একটা বড় অংশের ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপরেও যে কারণগুলি ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলেছে তা হলো, প্রার্থীতালিকা প্রকাশে অত্যধিক তাড়াহুড়ো করা হয়েছিল। ফলে কর্মীরা হত্যোদম হয়ে পড়েছিলেন। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের ফলে উৎসাহ হাড়িয়ে ফেলেছিল। এছাড়াও উল্লেখ করা হয়েছে, উন্নয়নের নামে দেদার বুলডোজারের ব্যবহার সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও ভয়ের সঞ্চার করে। পুর্নবাসন নিয়ে জনমানসে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

রাজনৈতিক কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হলো, বহুজন সমাজবাদী পার্টি সংখ্যালঘু বা পিছিয়ে পড়া অংশের ভোট কাটতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই জায়গায় অনেকক্ষেত্রে বিজেপির ভোট কেটে নিয়েছে। আবার শুধু সাধারণ ভোটাররা নয়, দলের কোড় ভোটারাও দলের নেতাদের শিক্ষা দিতে বিরোধীদের ভোট দিয়েছে। এছাড়াও ঠাকুর সম্প্রদায় ছাড়াও কুর্মি, কুশওয়াহা, শাক্য, পাসি ও বাল্মিকী সমাজ দলের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। দলের উপরতলা থেকে নিচুতলার নেতাদের উদ্ধত আচরণের পরিবর্তন না করলে পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব নয়।

People are also reading