হোম পিছনে ফিরে যান

নির্বাচনী সহিংসতা, ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে শত শত মানুষ

rtvonline.com 2024/6/26

ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া বাগেরহাটের তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন গত ৯ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে নির্বাচন পরবর্তি সহিংসতায় মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলা উপজেলায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী সমর্থক আহত হয়েছে। এরমধ্যে শুধু মোরেলগঞ্জ উপজেলায় আহত নেতাকর্মীর সংখ্যা শতাধিক। হামলার ভয়ে অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে ইউনিয়ন পরিষদের ভবনে আশ্রয় নিয়েছে । নেতাকর্মীদের উপরে হামলা ও নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পরাজিত প্রার্থী। সহিংসতার বিষয়টি পুলিশ স্বীকার করে জানান, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৯ জুন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর অনেক হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলা করা হয়েছে বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। নির্বাচনী পরবর্তী সহিংসতা মোরেলগঞ্জ উপজেলার আহত অনেক নেতাকর্মী বিভিন্ন হাসপাতালের সিটে কাতরাচ্ছেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই প্রার্থীর এজেন্ট, সমর্থক নারী-পুরুষ উভয়ের পরিবারে হামলা, লুটপাট ও অত্যাচার নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আহতরা।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন মোরেলগঞ্জ উপজেলা উত্তর সুতালরি গ্রামের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুয়াল হোসেন জোয়াদ্দার (৬৬) বলেন, দোয়াত কলম প্রতিকের কেন্দ্র সমন্বয়ক থাকার কারণে নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে বিজয়ী প্রার্থীর লোকজন রাস্তার উপর ফেলে আমাকে মারধর করে। বৃদ্ধ বয়সে কখনও আশা করিনি, এমন হামলার শিকার হবো।

নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শাহ জামাল তালুকদার বলেন, ছোট বেলা থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আওয়ামী লীগের দুইজন প্রার্থী ছিলেন, একজনের পক্ষে কাজ করায়, আজ আমি হাসপাতালে। শুধু আমি নয়, এলাকার অনেক নেতাকর্মীকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শর্মী রায় বলেন, সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে হামলা হচ্ছে বাড়ি ঘরে। তাই অনেকে নিরুপায় হয়ে খাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। এই অবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে এসব পরিবারের নারী, পুরুষ ও শিশু। তাদের অভিযোগ একই দলের নেতাকর্মী হয়ে এ ধরনের নির্যাতন বিগত দিনের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এমনকি নিজ এলাকায় চিকিৎসা নিতে পারছেন না তারা। হামলাকারীদের আইনের আওতায়নে বিচার দাবি জানিয়ে এলাকায় নিরাপদে বসবাস করতে পারে তার জন্য দাবি জানানো হয়।

পরিষদে আশ্রয় নেওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দোয়াত কলম প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোজাম্মেল হক মোজামের ভোট কেন্দ্রের এজেন্ট নুপুর আক্তার বলেন, ভোট কেন্দ্রে দোয়াত কলম প্রতিকের এজেন্ট ছিলাম। ভোটে আমাদের প্রার্থী হেরে যায়। ভোটেরদিন বিকেলেই খাউলিয়া এলাকার দেলোয়ার খলিফা ও রানা শিকদার আমাকে হুমকি দেয়। পরের দিন সকালে খাউলিয়া বাজারে থাকা আমার বাবার সাইকেল-ভ্যানের গ্যারেজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমাকে মারধর ও রাস্তায় অপমান করবে বলে হুমকি দিয়েছে। এই অবস্থায় মান সম্মান বাঁচাতে ইউনিয়ন পরিষদে এসে আশ্রয় নিয়েছি। আমরা জীবনের নিরাপত্তা চাই।

খাউলিয়া ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক ইউপি সদস্য শাহনাজ বেগম বলেন, ভোটের পরে এলাকায় যা ইচ্ছে তাই করছে দেলোয়ার খলিফা ও রানা শিকদার। অনেককে মারধর করেছে। আমার কাছে টাকা চেয়েছে, মারধরেরও হুমকি দিয়েছে। কারও কারও দোকান পাট বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকের সাথে আমিও পরিষদে এসে আশ্রয় নিয়েছি। আওয়ামী লীগ করেও যদি এই ধরণের নির্যাতনের শিকার হতে হয়, তাহলে আমরা কোথায় যাব।

দেলোয়ার খলিফা ও রানা শিকদারের লোকজনের মারধরে মাথা ফেটেছে খাউলিয়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুণ অর রশীদের। তিনিও বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন খাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে। তিনি বলেন, অপরাধ শুধু দোয়াত কলম প্রতিকের এজেন্ট ছিলাম। এজন্য আমাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিছে। এলাকার অনেকেই এখন বাড়ি ছাড়া।

খাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার সাইদুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দল থেকে একাধিক প্রার্থী হয়েছেন। কর্মীরা যার যার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। আমরাও দোয়াত কলম প্রতিকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি। কিন্তু আনারস প্রতিকের প্রার্থী বিজয় লাভ করায়, তার সমর্থকরা এলাকার লোকজনের উপর অমানুষিক অত্যাচার করছে। সম্মান ও প্রাণ বাঁচাতে অনেক লোক ইউনিয়ন পরিষদের এসে আশ্রয় নিয়েছে। অতি দ্রুত এই অত্যাচার নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানান এই জনপ্রতিনিধি।

পরাজিত প্রার্থী দোয়াত কলম প্রতিকের প্রার্থী মোজাম্মেল হক মোজাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একই দল থেকে প্রার্থী হয়েছিলাম। নির্বাচনের আগে ও পরে আমার কর্মী-সমর্থকদের উপর যে নির্যাতন হচ্ছে তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। দুই দিনে আমার শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক আহত হয়েছে। অনেকের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও লুটপাট করেছে তারা।

তিনি আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, আমি যদি নির্বাচন করে ভুল করি, তাহলে আমাকে মারধর করুক। তবু আমার কর্মী-সমর্থকদের উপর অত্যাচার নির্যাতন বন্ধ করুক। তাদের উপর অত্যাচার আমি আর সহ্য করতে পারছি না। চলমান সহিংসতা বন্ধের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই নেতা।

তবে নবনির্বাচিত মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী খান বলেন, সবাইকে শান্ত থাকতে বলা হয়েছে। কোন প্রকার বড় সহিংসতার খবর পাইনি। অনেকে আবার ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে এই সময়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। কোথাও কোন সমস্যা না হয় এজন্য সবাইকে বলা হচ্ছে।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. রাসেলুর রহমান বলেন, নির্বাচন পরবর্তী তিন উপজেলায় কিছু ছোট-খাট সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বড় ধরণের সহিংসতা এড়াতে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

People are also reading