হোম পিছনে ফিরে যান

Alipurduar | ডিমার জলে ভাসল শহর, ত্রাণ জোটেনি, হাঁড়ি চড়েনি অনেকের ঘরে

uttarbangasambad.com 2024/10/6
ছবি: জয়দেব দাস

মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ, আলিপুরদুয়ার: কোথাও কোমর, কোথাও বুকসমান জল (Flood Like Situation)। শোয়ার ঘর থেকে রান্নাঘর সবই ভাসছে। ফলে দিনভর হাঁড়ি চড়েনি বিদ্যাসাগরপল্লির অধিকাংশ বাড়িতেই। একদিকে খাবার তো নেই, পানীয় জলটুকুও জোটেনি অনেকের। শুক্রবার অনাহারে দিন কাটল বহু গরিব পরিবারের। দিনভর কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুপুর পর্যন্ত এলাকায় একটা জলের ট্যাংকও পাঠায়নি পুরসভা। প্রশাসন থেকে চিঁড়ে-মুড়ির মতো শুকনো খাবার দেওয়া হয়নি।

এলাকায় অধিকাংশই দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার। অসহায়তার কথা বলতে গিয়ে তাদের চোখ ছলছল করছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ডিমা নদীর (Dima River) জলে শুক্রবার ভোর থেকে গোটা এলাকা প্লাবিত। এলাকার বাসিন্দাদের খোঁজও কেউ নিতে আসেননি। প্রায় একই অবস্থা শহরের (Alipurduar) মিলনপল্লির বাসিন্দাদেরও। পুরসভার চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ কর বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিতে নদীর জল বেড়ে চরের বাসিন্দারা জলবন্দি হয়েছেন। পানীয় জল পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।’

বিদ্যাসাগরপল্লির বাসিন্দা ভোলা বর্মন বলেন, ‘শাটারিং মিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাই। গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির জন্য কাজে যেতে পারিনি। রোজগার বন্ধ, ধারদেনা করে খাওয়াদাওয়া চলছিল। শুক্রবার ভোরে শোয়ার ও রান্নাঘরে জল ঢুকেছে। ফলে রান্না বন্ধ। রাতের বেলা নদীর জল আরও বাড়লে পরিজনদের নিয়ে রাস্তায় এসে রাত কাটাতে হতে পারে। পুরসভা বা প্রশাসনের কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি। একটু শুকনো খাবার দিলেও ছোট বাচ্চাগুলো খেতে পারত। এলাকার সবক’টি টিউবওয়েল এখন জলের তলায়। ফলে পানীয় জলও অনেক দূর থেকে আনা ছাড়া উপায় নেই।’ কুন্তী বর্মন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আগে জল হলে পুরসভা থেকে শুকনো খাবার দেওয়া হত, এবারে সেটাও পাচ্ছি না।’ ঊর্মিলা বর্মন, টিনা বর্মনরা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। কেউ দিনমজুর, কেউ টোটো চালায়। আমাদের পক্ষে জল বা খাবার কেনা সম্ভব নয়।’ ওই এলাকার বাসিন্দা পার্বতী বর্মন বলেন, ‘স্বামী টোটো চালায়। টোটোতে চার্জ নেই, তাই রুটিরুজিও নেই।’

মিলনপল্লি এলাকায় কোমর জল অনেকের বাড়িতেই। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ভোট নেই, তাই কেউ এখন আমাদের খোঁজও নিতে আসে না। ত্রাণসামগ্রীরও বালাই নেই। শহরের বিধানপল্লির বাসিন্দা রতন রায় বলেন, ‘এক রাতের বৃষ্টিতে ঘরে জল ঢুকেছে। যাতায়াতের রাস্তায় হাঁটুজল। এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে কারও কোনও হেলদোল নেই। বারবার বৃষ্টি হলে আমাদের বাঁধের ভেতরে থেকেও ভাসতে হয়।’

শহরের নিকাশি ব্যবস্থা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ছে। শহরের প্রধান রাস্তার ধারে ১১ হাত কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা শ্যামল রায়ের কথাতেও তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িতে দুপুর পর্যন্ত হাঁটুজল জমেছিল। শহরের বৃষ্টির জল বেরোনোর নালা কোথায়?’

পুরসভার চেয়ারম্যান অবশ্য বলেন, ‘এদিন বছরের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। ফলে সেই জল বেরোতে একটু সময় লেগেছে। বিকেলের পর শহরের অধিকাংশ এলাকার জমা জল বের হয়ে গিয়েছে।’

People are also reading