হোম পিছনে ফিরে যান

এখনো ‘বহাল তবিয়তে’ কাউন্সিলর মনসুর

jagonews24.com 2 দিন আগে
এখনো ‘বহাল তবিয়তে’ কাউন্সিলর মনসুর
হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল, ইনসেটে জাহিদুল ইসলাম টিপু ও সামিয়া আফরান প্রীতি/ফাইল ফটো

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুর। মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি। এ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হলেও মনসুরের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

স্থানীয় সরকার আইনে কোনো কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করলে তাকে বরখাস্ত করার বিধান আছে। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই বছর পেরোলেও স্ব-পদে থেকে বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছেন অভিযুক্ত মনসুর।

এ হত্যা মামলার বাদী ডিএসসিসির সংরক্ষিত-৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি। তিনি জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী। ডলির অভিযোগ, টিপু হত্যাকাণ্ডের পেছনে কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুরের বড় ভূমিকা ছিল। আদালতে দাখিল করা ডিবি পুলিশের চার্জশিটে (অভিযোগপত্র) তা স্পষ্ট উল্লেখ আছে। তাই মনসুরসহ ৩৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এক বছর আগে এ অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। কিন্তু এখন পর্যন্ত মারুফ আহমেদ মনসুরকে বরখাস্ত করেনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অবগত আছি। কিন্তু ডিএসসিসি কেন মারুফ আহমেদ মনসুরের বিষয়ে তথ্য জানাচ্ছে না তা জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। আর বিকল্প উপায়ে কীভাবে তার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা যায় তাও বের করবো।- স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম

তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিপু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মারুফ আহমেদ মনসুর চার্জশিটভুক্ত আসামি কি না তা জানাতে মন্ত্রণালয় থেকে ডিএসসিসিকে তিন দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একটি চিঠিরও জবাব দেয়নি সংস্থাটি। এখন বিকল্প উপায়ে তথ্য সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অবগত আছি। কিন্তু ডিএসসিসি কেন মারুফ আহমেদ মনসুরের বিষয়ে তথ্য জানাচ্ছে না তা জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। আর বিকল্প উপায়ে কীভাবে তার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা যায় তাও বের করবো।’

এ মামলায় ২০২৩ সালের ১৬ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারাহ দিবা ছন্দার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন মনসুর। শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। পরে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তিনি জামিন পান।

এর আগে ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাত ১০টার দিকে শাহজাহানপুরে ব্যক্তিগত গাড়িতে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা সামিয়া আফরান প্রীতি (১৯) নামে এক কলেজছাত্রীও মারা যান। এছাড়া টিপুর গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ডিএসসিসির সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে টিপুর স্ত্রী অভিযোগ করেন, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে ২০২, উত্তর শাহজাহানপুর মানামা ভবনের বাটার দোকানের সামনে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা তার স্বামী জাহিদুল ইসলাম টিপুকে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।

২০২৩ সালের ৫ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুরসহ ৩৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তদন্তে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মেলে। তবে এক্সেল সোহেল নামে এক আসামির পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় অব্যাহতির আবেদন করা হয়। এক্ষেত্রে বিচারের জন্য মারুফ আহমেদ মনসুরসহ ৩৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

আরও পড়ুন

এর এক মাস পর ১০ জুলাই কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বরাবর আবেদন করেন টিপুর স্ত্রী। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২ আগস্ট ডিএসসিসির ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনসুরের বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয়েছে কি না, তা জানতে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। চিঠিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে মনসুরের বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণ করার সঠিক তথ্য যাচাই করে মন্ত্রণালয়কে তথ্য বা প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

কিন্তু ১০ মাস পরও এ চিঠির কোনো জবাব দেননি ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। পরে চলতি বছরের ১৪ মে তৃতীয় দফায় আবার একই বিষয়ে চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সোমবার (১ জুলাই) পর্যন্ত চিঠিরও জবাব দেয়নি সংস্থাটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের চিঠি আমরা পেয়েছি। কিন্তু এ বিষয়ে আদালত থেকে কোনো সই মুহুরি নকল বা আদেশ আমরা পাইনি। তাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানোর কোনো অবকাশ এখনো তৈরি হয়নি।’

জানতে চাইলে ডিএসসিসির ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুর জাগো নিউজকে বলেন, ‘টিপু হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আগে-পিছনে আমি ছিলাম না। এ ঘটনায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। ডিএসসিসির চিঠির জবাব আটকাতে কোনো তদবিরও করিনি। কাউন্সিলর হিসেবে নিয়মিতই অফিস করছি।’

আইনে যা বলা হয়েছে

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ এর ১২ ধারা অনুযায়ী ‘যে ক্ষেত্রে কোনো সিটি করপোরেশন মেয়র অথবা কাউন্সিলরের অপসারণের জন্য ধারা ১৩ এর অধীন কার্যক্রম আরম্ভ করা হইয়াছে অথবা তাহার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালত কর্তৃক গৃহীত হইয়াছে, সে ক্ষেত্রে সরকার, লিখিত আদেশের মাধ্যমে, ক্ষেত্রমত, মেয়র বা কোনো কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করিতে পারিবে।’

টিপু হত্যাকাণ্ডে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আলী হোসাইন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। পরে গত ২০ জুন ৩৩ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এদিন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আলী হোসাইনের আদালতে নিহত টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এদিন তার জেরা শেষ না হওয়ায় পরবর্তী জেরা ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৮ জুলাই দিন ধার্য করেন আদালত।

ফারহানা ইসলাম ডলি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মারুফ আহমেদ মনসুর চার্জশিটভুক্ত আসামি এ তথ্য দক্ষিণ সিটির সব কর্মকর্তাই জানেন। তাদের কাছে চার্জশিটের ফটোকপিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও তারা মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব দিচ্ছে না।’

আওয়ামী লীগ থেকে মারুফ আহমেদ মনসুর বহিষ্কার

টিপু ও প্রীতি হত্যাকাণ্ডের ১৫ মাস পর ২০২৩ সালের ৭ জুন মারুফ আহমেদ মনসুরকে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে সংগঠন থেকে বরখাস্ত করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। তিনি এ কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। এছাড়া ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদারকে বরখাস্ত করা হয়। গোলাম আশরাফ ডিএসসিসির ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর।

People are also reading