হোম পিছনে ফিরে যান

সংসদ নির্বাচনের বিরোধে এখনও পুড়ছে রাজশাহী

newspostbd.com 2024/9/29
সংসদ নির্বাচনের বিরোধে এখনও পুড়ছে রাজশাহী

রাজশাহী প্রতিনিধি:

গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরোধ রাজশাহীর প্রতিটি উপজেলায় তীব্র আকার ধারণ করেছে। এরই জেরে গত শনিবার বাঘায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। এতে স্থানীয় এমপি শাহরিয়ার আলমের অনুসারী বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলসহ অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ঘণ্টাব্যাপী চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণ। পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে অন্তত ২০ জন গুলিবিদ্ধ হন।

নেতাকর্মীরা জানান, রাজশাহীর সব উপজেলায় এখন একই রকম পরিস্থিতি বিরাজমান। যে কোনো সময় সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এই বিরোধের নেপথ্যে রয়েছেন মূলত সংসদ সদস্য ও সংসদ নির্বাচনে তাঁর প্রতিপক্ষ। এতে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরাও।

এবারের সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী সদর ছাড়া সব আসনেই দলীয় প্রার্থীরা বিজয়ী হন। তবে নির্বাচনের ছয় মাস পরও বিরোধ মেটেনি।
রাজশাহী-৬ আসনে নৌকার প্রার্থী সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক এমপি রাহেনুল হক রায়হান।

নেতাকর্মীরা জানান, শনিবারের সংঘর্ষের পর শাহরিয়ার আলমের প্রতিপক্ষ ২৪৬ জন নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। বিরোধ নিষ্পত্তিতে দলের নেতাদের কোনো ভূমিকা নেই। বরং জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও বিভক্ত। রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতেই এ সংকট চলছে।

রাজশাহী-১ আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনবারের এমপি ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে ভোটযুদ্ধ হয় দলের আরেক নেতা গোলাম রাব্বানীর। নির্বাচনের পর গত ১০ জানুয়ারি গোলাম রাব্বানী সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন, ফারুক চৌধুরীর ক্যাডাররা তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা করছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠাচ্ছে। এ বিষয়ে ফারুক চৌধুরীকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে তাঁর অনুসারী গোদাগাড়ী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকেরাই নৌকার সমর্থকদের ওপর হামলা করছে।’

রাজশাহী-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি সদ্য সাবেক এমপি আয়েন উদ্দীন। তবে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দু’পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে। আয়েন উদ্দীন বলেন, নির্বাচনের পর থেকে তাঁর নেতাকর্মীর ওপর হামলা হচ্ছে।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে তিনবারের এমপি এনামুল হক এবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে লড়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। এখানে বিজয়ী হয়েছেন দলীয় প্রার্থী তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ। তিনি মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই তাঁর কর্মীরা এনামুল হকের সমর্থকদের সঙ্গে দফায় দফায় হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় জড়িয়েছেন।
এনামুল হক অভিযোগ করেন, আজাদের সমর্থকদের হামলা-নির্যাতনে তাঁর কর্মী অনেকেই এলাকাছাড়া।

রাজশাহী-৫ আসনের নৌকার প্রার্থী সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারার বিরুদ্ধে লড়াই করে পরাজিত হন জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি ওবায়দুর রহমান। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনের পর দারার সমর্থকরা তাঁর কর্মীদের পুকুরের মাছ ও পানবরজ লুট করে নিয়েছে। একের পর এক হামলা ও মামলা দিয়ে ঘায়েল করছে। এ বিষয়ে দারার বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

রাজশাহী-৬ আসনে শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি রাহেনুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তাঁর সমর্থকদের ওপর একের পর এক হামলা করছে প্রতিপক্ষ। প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা-মামলা হচ্ছে। এ বিষয়ে কথা বলতে শাহরিয়ার আলমের নম্বরে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

People are also reading