হোম পিছনে ফিরে যান

দিল্লির মসনদে শেষ হাসি কার

news24bd.tv 2024/5/19
দিল্লির মসনদে শেষ হাসি কার

পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত। দেশটির বর্তমান ভোটারসংখ্যা ৯৬ কোটি ৯০ লাখ। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় আট ভাগের এক ভাগ। এমন একটি দেশের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো বিশ্ব।

বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান একসময় একটি দেশ ছিল। সে জন্য এখনো দেশগুলোর যেকোনো বিষয়ে অপরাপর দেশগুলোর জনগণের মধ্যে এক ধরনের কৌতূহল তৈরি হয়। আর তা যদি হয় নির্বাচন, তাহলে তো কৌতূহলের মাত্রা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
ভারতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা।

উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা ও নিম্নকক্ষ লোকসভা। এ ছাড়া আছে রাজ্যভিত্তিক বিধানসভা। ২৮টি প্রদেশ ও আটটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল নিয়ে লোকসভায় মোট আসন ৫৪৫টি। এর মধ্যে দুটি আসন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত।

বাকি ৫৪৩ আসনে জনগণের সরাসরি ভোটে পাঁচ বছরের জন্য সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, যার মধ্যে ১৩২টি আসন পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ। মহিলাদের জন্য কোনো আসন সংরক্ষিত নেই, সবাইকেই সরাসরি জনগণের ভোটে বিজয়ী হতে হয়। অন্যদিকে রাজ্যসভার ২৪৫ আসনে সংসদ সদস্য ও বিধায়কদের ভোটে নির্বাচিত হন। যেসব মেধাবী ও বিদগ্ধজন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন না কিংবা নির্বাচিত হন না, তাঁদের প্রজ্ঞা ও জ্ঞানকে দেশের কাজে লাগানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলো রাজ্যসভায় তাঁদের  মনোনীত করেন। ভারতের ১৮তম লোকসভার ভোট ১৯ এপ্রিল শুরু হয়েছে।

মোট সাত ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় ধাপে ২৬ এপ্রিল, তৃতীয় ধাপে ৭ মে, চতুর্থ ধাপে ১৩ মে, পঞ্চম ধাপে ২০ মে, ষষ্ঠ ধাপে ২৫ মে এবং সপ্তম ধাপে ১ জুন ভোট হবে। ৪ জুন ফল ঘোষণা করা হবে। বিজেপি, কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, সিপিআইএমসহ ছয়টি জাতীয় দল ও ৫৮টি আঞ্চলিক দল নির্বাচনের ময়দানে নেমেছে। ১৯৫২ সালে প্রথম ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে একবারও দেশটি স্বৈরতন্ত্রের কবলে পড়েনি। ক্ষমতা পরিবর্তন হয়েছে একমাত্র জনগণের ভোটে। ভারতের গণতন্ত্রে প্রতিটি ভোটারকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়।
মোদিকে চ্যালেঞ্জ করে জাতীয় ও আঞ্চলিক দুই ডজনেরও বেশি দল নিয়ে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) জোট তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতার দ্বন্দ্বে তারা এক হয়ে নির্বাচন করতেও পারছে না। নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে একজনকে মুখ করতে পারেনি। এখানে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাগড়ে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, মহারাষ্ট্রের শারদ পাওয়ারসহ এক ডজন ব্যক্তি ছিলেন প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার। অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হওয়ার মতো অবস্থায় পড়েছে জোট। অভিমান করে ভোটের আগেই নীতীশ কুমার বিজেপি জোটে যোগ দিয়েছেন।

বিজেপির এবারের নির্বাচনের স্লোগান ‘আব কি বার, চার শ পার’। তাদের টার্গেট বিজেপি একাই পাবে ৩৭০ আর জোট মিলে ৪০০ পার। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস জোট শুধু একবার ৪০০ আসন অতিক্রম করেছিল। এই দাবি তাদের অমূলক নয়। মোদির নেতৃত্বে প্রতিটি নির্বাচনে আসনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) ৩৩৬টি আসন আর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) মাত্র ৬০টি আসন পায়। পরেরবার কংগ্রেসের অবস্থা আরো খারাপ হয়। মাত্র ৫২ আসনে জিতে বিরোধী দলের মর্যাদাও হারায় তারা। আর বিজেপি একাই জিতেছিল ৩০৩টি এবং জোটবদ্ধভাবে ৩৫৩টি আসন।

ভারতের রাজনীতিতে একটি কথা চালু আছে, ‘উত্তর প্রদেশ যার, দিল্লির ক্ষমতা তার। ’ সেখানে মোট ভোটার রয়েছে ২৪ কোটি। উত্তর প্রদেশে লোকসভার আসন সংখ্যা ৮০। এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন যে দল পায়, তারাই ক্ষমতায় যায়। ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ৭১টি এবং সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ৬২টি আসন। এ পর্যন্ত ভারতের আটজন প্রধানমন্ত্রী উত্তর প্রদেশ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। নরেন্দ্র মোদিও নিজ রাজ্য গুজরাট রেখে ২০১৯ সাল থেকে উত্তর প্রদেশের প্রাচীন শহর বারানসি আসন থেকে নির্বাচন করছেন। জনমত সমীক্ষা বলছে, এবারও ৭০-এর অধিক আসন বিজেপি পাবে। উত্তর প্রদেশ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলো হলো মহারাষ্ট্রে ৪৮টি, পশ্চিমবঙ্গে ৪২, বিহারে ৪০, তামিলনাড়ুতে ৩৯ এবং গুজরাটে ২৬টি আসন। অন্যদিকে সিকিম, নাগাল্যান্ড, আন্দামান, লাক্ষাদ্বীপ, লাদাখের মতো কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল থেকে একজন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

ভারতের স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ১৭ বার নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ সময়ই কংগ্রেস রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। বেশ কয়েকবার ছোট ছোট দল জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠন করলেও তারা একবারও মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। কংগ্রেসের বাইরে প্রথম অটল বিহারি বাজপেয়ির নেতৃত্বাধীন বিজেপি পূর্ণ মেয়াদ পূরণ করেছে। এরপর বর্তমান সময়ে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি টানা দুই মেয়াদ পূর্ণ করল।

ভারতের সব জনমত সমীক্ষা স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে, নরেন্দ্র মোদিই তৃতীয়বারের মতো বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিততে চলছেন। আর সেটি হলে তিনি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরুর টানা তিন মেয়াদে জয়ী হওয়ার রেকর্ড স্পর্শ করবেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় নরেন্দ্র মোদি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বিজেপির মধ্যে শুধু নয়, এই মুহূর্তে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো বিরোধী দলেরও কোনো নেতা নেই। কিন্তু সব কিছুর পর ভারতের জনগণই নির্ধারণ করবে পরবর্তী পাঁচ বছর কে হবেন দেশের নেতা। আর ৪ জুনই জানা যাবে দিল্লির মসনদে কে বসবেন, কে হাসবেন শেষ হাসি।

People are also reading