হোম পিছনে ফিরে যান

ব্রহ্মপুত্রে অপরিবর্তিত, ধরলা-দুধকুমার অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

banglatribune.com 2024/10/6

ব্রহ্মপুত্রের পর দুধকুমার ও ধরলার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ধরলা ও দুধকুমারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়েছে ৯ উপজেলার ৪৯ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। প্লাবিত হওয়ায় ৩৪১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি পাঠদান ও পরীক্ষা স্থগিত করেছে শিক্ষা বিভাগ।

বন্যাকবলিত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুধকুমার ও ধরলার পানি বাড়ার ফলে জেলার নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী ও সদর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ ও গৃহপালিত প্রাণী। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকটে বানভাসিদের ভোগান্তি চরমে।

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার প্রতিবেদন বলছে, রবিবার (৭ জুলাই) বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার ৯ উপজেলার ৬০১ দশমিক ২২ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত। সরকারি হিসাবেই প্লাবিত এলাকায় ৯৭ হাজার ৭৫০ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। শনিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত একদিনের ব্যবধানে পানিবন্দি মানুষ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার।

পানিতে বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষ নৌকায় ভাসমান জীবন যাপন করছেন। যাদের সে সামর্থ্য নেই তারা ঘরের ভেতর মাচান করে কিংবা ঘর ছেড়ে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। একেবারে নিরুপায় পরিবারগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছেন। শুকনো স্থান ও জ্বালানির অভাবে রান্না করতে পারছে না অনেক পরিবার।

বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের সঙ্গে খাদ্যকষ্টে রয়েছে গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি। প্লাবিত এলাকায় তৃণভূমি ও খড়ের ঢিবি তলিয়ে যাওয়ায় গোখাদ্যের সংস্থান নিয়ে বিপাকে পড়েছে পরিবারগুলো। কলাপাতা কিংবা শন দিয়ে প্রাণীদের ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। উপরন্তু প্রাণীদের বাসস্থান নিয়ে চলছে উৎকণ্ঠা।

উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মূসার চরের বাড়িঘরে এখনও কোমর থেকে বুক সমান উচ্চতায় পানি। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেশির ভাগ পরিবার অন্য জায়গায় চলে গেছে। নিরুপায় হয়ে বসবাস করা কয়েকটি পরিবারের জীবন এখন ভাসমান। তেমনই এক পরিবার রাবেয়া বেগমের। ভোগান্তি আর কষ্টের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাবেয়া বলেন, ‘থাকনের কন আর খাওনের কন, কোনও জায়গা নাই। নৌকায় থাহি। এহানেই রান্ধি, এহানেই খাই। বাচ্চাগো নিয়া বিপদে আছি। চারপাশে পানি। খালি ভয়ে থাহি। পানির দিকে চাই আর ভাবি, কহন নাইমা যায়।’

সদর উপজেলার দুধকুমার নদ তীরবর্তী ঘোগাদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে দুধকুমার নদের পানিতে ৫ শতাধিক পরিবার প্লাবিত হয়েছে। পানি কমবে এমন আশায় তারা বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে চান না। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’

শিক্ষা বিভাগ বলছে, জেলার ২৫৩টি প্রাথমিক এবং ৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩৬টি মাদ্রাসা এবং ৬টি কলেজ প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ২২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৬টি কলেজে শ্রেণি পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও ৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৩৬টি মাদ্রাসায় চলমান ষান্মাসিক পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে, পানিবন্দি মানুষের খাদ্যকষ্ট লাঘবে সরকারি ত্রাণতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। রবিবার পর্যন্ত জেলার দুর্গত মানুষদের জন্য ৩৮৭ মেট্রিক টন চাল এবং ১৮ হাজার ৯৮০ প্যাকেট শুকনো খাবার খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘ধরলা ও দুধকুমারের পানি বাড়ায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা দীর্ঘ হয়ে গেছে। সরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা ও স্যানিটেশনের দিকে আমরা নজর দিয়েছি। মানুষের কষ্ট লাঘব করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, জেলায় ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে দুধকুমার ও ধরলা নদীও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার (৭ জুলাই) দুপুরে দেওয়া বার্তায় পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ধরলা ও দুধকুমার অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তবে আগামী ৭২ ঘণ্টা ব্রহ্মপুত্র অববাহিকাসহ সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ধীরগতিতে উন্নতি হতে পারে।

People are also reading