হোম পিছনে ফিরে যান

পেঁয়াজ রক্ষায় ‘মডেল ঘর’

prothomalo.com 2024/10/6

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ফরিদপুরের জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সাহাদাত হোসেন বলেন, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৮ লাখ মেট্রিক টন। পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৩৫ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদিত পেঁয়াজের মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। ৩৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের মধ্যে শেষ পর্যন্ত প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ টিকে থাকে। ফলে চাহিদার থেকে বেশি উৎপাদন হওয়ার পরও দেশে প্রতিবছর ছয় থেকে সাত লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। পেঁয়াজ যাতে নষ্ট হয়, সে জন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তর পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণের মডেল ঘর নির্মাণ করেছে।

ফরিদপুরের জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সাহাদাত হোসেন আরও বলেন, দেশীয় প্রযুক্তিতে এই ঘর নির্মাণ করা যায়। এই ঘর নির্মাণে লাগে বাঁশ, কাঠ, রঙিন টিন, আরসিসি পিলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলায় ৬৫টি ‘মডেল ঘর’ নির্মাণ করার কথা। এর মধ্যে সালথায় ৩০টি ও নগরকান্দায় ৩৫টি ঘর নির্মিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৬২টি ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি মডেল ঘরে ৩০০ মণ করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। এসব ঘরে ৬ থেকে ৯ মাস পেঁয়াজ ভালো থাকবে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা। পাঁচজন কৃষকের জন্য একটি ঘর করা হয়েছে।

সালথার ঝোনাখালী গট্টি ও আডুয়াকান্দি গ্রামে পেঁয়াজ সংরক্ষের জন্য তিনটি মডেল ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সরেজমিনে ওই গ্রামগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকদের বাড়ির উঠানে ১ শতাংশ জমিতে ঘরগুলো বানানো হয়েছে। এসব ঘরের দৈর্ঘ্য ২৫ ফুট ও প্রস্থ ১৫ ফুট। প্রতিটি ঘর ১৫টি আরসিসি পিলার ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরের মেঝে থেকে তিন ফুট উঁচুতে পরপর তিন ফুট জায়গা রেখে তিনটি মাচা তৈরি করা হয়েছে। এই মাচার পেঁয়াজ ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। ঘরের নিচে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পেছনে দেওয়া হয়েছে ছয়টি বৈদ্যুতিক পাখা। এই বৈদ্যুতিক পাখা ঘরের গরম বাতাস বের করে দেয়। ঝড়বৃষ্টি থেকে পেঁয়াজ রক্ষা করতে চারপাশে রাখা হয়েছে ত্রিপল। প্রতিটি মডেল ঘরে ৩০০ মণ করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। এসব ঘরে ৬ থেকে ৯ মাস পেঁয়াজ ভালো থাকবে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা।

সালথার গট্টি ইউনিয়নে ঝোনাখালী গট্টি গ্রামে মো. আমজেদ মাতুব্বরের (৫২) বাড়িতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য একটি ‘মডেল ঘর’ নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি এক দফা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছেন। নিজের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়ে মো. আমজেদ মাতুব্বর বলেন, ‘আমি গত বছর থেকে পেঁয়াজ রাখা শুরু করি। গত বছর ১৪০ মণ পেঁয়াজ রেখেছিলাম। সে পেঁয়াজের মধ্যে ১৩৫ মণ পেঁয়াজ ভালো ছিল। তাঁর দেখাদেখি চলতি বছর সোহেল হোসেন ৫০ মণ ও শিউলি বেগম ৫০ মণ পেঁয়াজ রেখেছেন।

একই ইউনিয়নের আডুয়াকান্দি গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই মৌসুম থেকে তিনি পেঁয়াজ রাখা শুরু করেছেন। এবার তিনি ও তাঁর ভাই মো. ইফাজউদদ্দিন মিলে ৩০০ মণ পেঁয়াজ রেখেছেন। এখন পর্যন্ত পেঁয়াজগুলো ভালো আছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ফরিদপুর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য এই ঘর দেখে চাষিরা এই মডেলে ঘর নিজেরা নির্মাণ করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করবেন। তাহলে তাঁদের পেঁয়াজ আর নষ্ট হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফরিদপুরে প্রথম পর্যায়ে নির্মিত ৬৫টি পেঁয়াজের ঘরের সফলতার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আরও পেঁয়াজের ঘর নির্মাণ করা হবে।’

People are also reading