হোম পিছনে ফিরে যান

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছেই, সরকার এখন ব্যাংকমুখী

justnewsbd.com 3 দিন আগে
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছেই, সরকার এখন ব্যাংকমুখী

ধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমছে। সরকারের সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে এর প্রভাব অনেক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে। আবার ট্রেজারি বিল ও বন্ডে এখন অনেক বেশি সুদ মিলছে। ফলে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ না বেড়ে উল্টো কমছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ গত অর্থবছরের চেয়ে কমেছে ১৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের চেয়ে কমেছিল ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। এর ফলে শেষ সময়ে সরকারের ব্যাংক ঋণে নির্ভরতা বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার অন্যান্য কারণ রয়েছে। এক সময় বিত্তশালীরা নামে-বেনামে বড় অঙ্কের অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করত। দুর্নীতির অর্থও এখানে বিনিয়োগ করত। সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল হওয়ায় সেই সুযোগ অনেকটাই কমে গেছে। এ ছাড়া একক ব্যক্তির নামে কেনার ঊর্ধ্বসীমাও কমানো হয়েছে। 

জানা গেছে, সরকার অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণের প্রতি বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। গতকাল ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের বিশেষ নিলাম ডেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। 

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গত মে মাস পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গত অর্থবছরের চেয়ে বেড়েছে ৬১ হাজার ৩২০ কোটি টাকা, যা ১৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট, আস্থাহীনতাসহ নানা দুরবস্থার মধ্যে আগামী অর্থবছর ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। বাজেটের অঙ্ক মেলানোর জন্য এমন একটা লক্ষ্যমাত্রা ধরে দেওয়া হয়েছে। আর আগামী অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলে টাকা রেখে এখন ১২ শতাংশ সুদ মিলছে। ট্রেজারি বন্ডে সর্বোচ্চ সুদহার উঠেছে ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ। সঞ্চয়পত্রের তুলনায় যা বেশি। আবার ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মুনাফার বিপরীতে কোনো কর দিতে হয় না। উল্টো কর রেয়াত পাওয়া যায়। তবে ব্যাংক আমানত ও সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নির্ধারিত হারে কর কাটা হয়। এ ছাড়া যে কোনো বিনিয়োগের মধ্যে ট্রেজারি বিল ও বন্ডকে বেশি নিরাপদ মনে করা হয়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নেওয়াহয়েছে। যে কারণে বাজারে টাকার সরবরাহ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকছে। বাজারে ডলার বিক্রি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। গত বুধবার রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। গত ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ২১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। এর আগে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়েছিল ২০২১ সালের আগস্টে। 

সার্বিকভাবে সরকারের ব্যাংক ঋণ বাড়লেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার নিচ্ছে না। এর কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দেয়। গত মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ঋণ ১৬ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। একই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকে বেড়েছে ৭৮ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ১৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। যেখানে গত এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। গত বছরের এপ্রিল শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছিল ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

People are also reading