হোম পিছনে ফিরে যান

প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ

banglatribune.com 2024/5/19

রাত পোহালেই শুরু হবে দেশের প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। সংঘাত, সহিংসতার শঙ্কার মধ্য দিয়েই বুধবার (৮ মে) দেশের এ ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে সকাল ৮টায়, বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত। এ ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে ২২টি উপজেলায় ইভিএমে এবং বাকিগুলোয় ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়া হবে। প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণার পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া এবং মামলাসহ অন্যান্য কারণে ১৩টি উপজেলায় ভোট হচ্ছে না।

নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বেশিরভাগ কেন্দ্রে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পাঠানো হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, তারা কেন্দ্রীয়ভাবে এ ভোট মনিটর করবে। কোনও ধরনের অনিয়ম হলেই তাৎক্ষণিকভাবে তারা ব্যবস্থা নেবে।

দলীয় প্রার্থী একজন

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের দুটি পদসহ তিনটি পদেই দলীয় মনোনয়নে দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান রয়েছে। তবে এবার মাত্র একজন প্রার্থী দলীয় প্রতীকে ভোট করছেন। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী নজরুল ইসলাম সরোয়ার মোল্লা নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় লাঙ্গল প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন। এছাড়া এ ধাপের নির্বাচনে অন্য কোনও দলের প্রার্থী নেই।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা এবার উপজেলা পরিষদে দল থেকে কোনও প্রার্থী মনোনয়ন দেবে না। অন্যদিকে সরকারবিরোধী বিএনপি তার সমমনা দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করেছে। অবশ্য দলীয়ভাবে ভোট বর্জন করলেও বেশ কিছু উপজেলায় বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে যাওয়ার কারণে দলটির বেশকিছু নেতাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।

ভোট হবে কয়টি উপজেলায়

প্রথমধাপে ১৫২টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের জন্য গত ২১ মার্চ তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে মামলাসহ অন্যান্য কারণে ৮টি উপজেলার নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। এছাড়া তিনটি পদের প্রার্থী বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ায় ৫টিতে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়ছে না। ফলে ১৩৯টি উপজেলায় বুধবার ভোট হবে।

যে ৫টি উপজেলার সব পদে বিনাপ্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন সেগুলো হলো– নোয়াখালীর হাতিয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর, ফেনীর পরশুরাম, বাগেরহাট সদর ও মাদারীপুরে শিবচর। সব মিলিয়ে প্রথম ধাপে ৮ জন চেয়ারম্যান, ১০ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ১০ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

মামলার কারণে নারায়ণগঞ্জ সদর, কুমিল্লার লাঙ্গলকোর্ট ও জামালপুরের সরিষাবাড়ি, প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে টাঙ্গাইলের গোপালপুর, নওগাঁর মহাদেবপুর, প্রশাসনিক কারণে বান্দরবানের থানছি ও রোয়াংছড়ি এবং ধাপ পরিবর্তনের কারণে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর নির্বাচন স্থগিত হয়েছে।

প্রার্থী কী

প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে বাতিল হয়েছে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র। ফলে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ৭৮৬ জনে। তবে নানা কারণে কয়েকটি উপজেলা বাতিল বা পিছিয়ে যাওয়ায় এ প্রার্থী সংখ্যা এক হাজার ৬৩১ জনে দাঁড়িয়েছে।

নির্বাচনে স্বাভাবিক এলাকার ভোটকেন্দ্রে তিন জন পুলিশ, চার জন আনসার/ভিডিপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭-১৮ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮-২১ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

নিরাপত্তা

ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ১২ হাজার ৭৮০ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে এবং রিজার্ভ থাকবে এক হাজার ৮৩০ জন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় ‘ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় ৬ থেকে ১০ মে পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিজিবি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি কাজ করবে।

নির্বাচনে মোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে ৮২ হাজার ৭৩৩ জন। এর মধ্যে ভোটকেন্দ্রে ৪১ হাজার ৫৩০ জন, মোবাইল টিমে ১১ হাজার ৮৮৩ জন, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৫ হাজার ৩৬৮ জন এবং অন্যান্য ডিউটিতে ২৩ হাজার ৮৫২ জন।

কিছু দুর্গম কেন্দ্রে ব্যালট পেপার আগে পাঠানো হলেও বেশিরভাগ কেন্দ্রে এগুলো যাবে ভোটের দিন সকালে (ছবি: ফোকাস বাংলা)
© 2024 Bangla Tribune Online Media

মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র‌্যাব মোতায়েন থাকবে দুই হাজার ৩৯২ জন ও রিজার্ভ থাকবে ২৫৬ জন। ভোট কেন্দ্র এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে এক লাখ ৫৯ হাজার ৮৭৪ জন।

উপজেলায় ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ১৩৯ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনি অপরাধ আমলে নিয়ে তারা সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ সম্পন্ন করবেন। পরবর্তী ধাপগুলোর জন্যও একইভাবে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেবে ইসি। এই ধাপের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করবেন আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে জেলা প্রশাসক।

ভোটকেন্দ্র 

সূত্র জানায়, প্রথম ধাপের এ নির্বাচনে ১৩৯ উপজেলায় কেন্দ্র রয়েছে ১১ হাজার ৪০০টির মতো। এর মধ্যে দুর্গম এলাকার ৪২৪টি কেন্দ্রে মঙ্গলবার রাতেই নির্বাচনি সরঞ্জামসহ ও ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। আর ১১ হাজার কেন্দ্রে নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানো হলেও ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে ভোটের দিন ভোরে।

দুর্গম যেসব উপজেলায় মঙ্গলবার ব্যালট পাঠানো হয় তার মধ্যে রয়েছে– কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী, চর রাজীবপুর; মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া; হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, সরাইল, সন্দ্বীপ; রাঙ্গামাটির রাঙামাটি সদর, কাউখালী, জুড়াছড়ি, বরকল; বান্দরবানের বান্দরবান সদর, আলীকদম; খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রামগড়; সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লা ও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, চার ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনের সব ধাপেই দুর্গম কেন্দ্রে আগের দিন ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। অন্যগুলো যাবে ভোটের দিন সকালে। মাঠ প্রশাসন থেকে দুর্গম এলাকা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন পাঠালে নির্বাচন কমিশন সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়। ভোটে কারচুপি রোধের অংশ হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশন আগের রাতে ব্যালট না পাঠিয়ে ভোটের দিন ভোটে পাঠানো শুরু করেছে কমিশন।

People are also reading