হোম পিছনে ফিরে যান

গলা থেকে বরশি খুলে নিয়েছেন, কথা বলতে চেষ্টা করবো: সংসদে লতিফ সিদ্দিকী

banglatribune.com 2024/5/21
আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী (ফাইল ছবি)
© 2024 Bangla Tribune Online Media

সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, যাদের গলায় বরশি লাগানো আছে তারা কথা বলবে না। আমিও ৬০ বছর বলিনি। আজ আমার গলার থেকে আপনারাই বরশিটা খুলে নিয়েছেন। তাই আমি যতক্ষণ আছি, আপনি যতই বাধা দেন, আমি কথা বলতে চেষ্টা করবো।

রবিবার (৫ মে) জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) সংশোধিত বিল-২০২৪ উত্থাপনের বিরোধিতা করে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করে সংসদে বিল তোলা হয়।

বিলটি উত্থাপনে বিরোধিতা করেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সাবেক সদস্য ও সরকারের সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জের ধরে ২০১৪ সালে মন্ত্রিসভা ও দল থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে তার সংসদ সদস্য পদও বাতিল হয়। পরে তিনি দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে একেবারে নিষ্ক্রীয় হয়ে যান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে নির্বাচিত হয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী। চলতি সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় ১০ মিনিট সময় দেওয়ার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে সংসদ থেকে ১০মিনিটের জন্য ওয়াক আউট করেছিলেন লতিফ সিদ্দিকী।

রবিবার বিলের বিরোধিতা করে দেওয়া বক্তব্যে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, স্থানীয় সরকার ধারণা নসাৎ করাই শুধু নয়, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাটি কোনোদিনই আমরা কার্যকর করিনি, করতে দেইনি। আমরা যতই গণতন্ত্রের কথা বলি, চেতনা ও চৈতন্যে জাতিগতভাবে আমরা এখনও আমরা গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন হতে পারিনি। যেখানেই ব্যর্থতা সেখানেই প্রশাসক নিয়োগের একটা প্রবষতা লক্ষ্য করা যায়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রশাসকের বিষয়টি গণতন্ত্রবিরোধী চেতনা।

তিনি বলেন, আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা বঙ্গবন্ধুকে শুধু জিহ্বা থেকে উচ্চারণ করি। অন্তরে অন্য কিছু বিবেচনা করি। আইন প্রত্যাহার করে গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করবেন।

তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদকে আমরা গলা টিপে মেরে ফেলেছি। ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি হলো জেলা প্রশাসক। এ ধরনের চিন্তা আমরা কেন করছি? আমরা কি পিছু হাটছি? আমাদের বোধ হয় ভুতের পা হয়ে গেছে। আমরা কোথায় যাচ্ছি? আমাদের চিন্তাটা কী? কোথায় যেন আমাদের একটা সমস্যা। সব সময় আমরা পরের হাতে লবণ খাই।

তিনি বলেন, এই আইন সংসদ সদস্যরা রচনা করেন না। আমলাদের মস্তিষ্ক থেকে যে আইন প্রণয়ন করা হয় তা কখনও জনস্বার্থে আসতে পারে না।

লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের এক পর্যায় সংসদে সভাপতির দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু তাকে থামিয়ে দিয়ে বিষয়ের ওপর (বিলের) আলোচনা করতে বলেন। জবাবে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলতে গেলে এই সংসদের সময়ের অভাব হয়। কিন্তু হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপিতে অর্থের অপচয় হয় না। কিন্তু কোনও সদস্য একটু সময় বেশি চাইলেই অভাব হয়।

স্পিকারকে সম্বোধন করে তিনি বলেন, এই সংসদে জাতির চেতনার কথা, জাতির স্বার্থের কথা, জাতির ভবিষ্যতের কথা আলোচনা হবে। সেখানে যে বলতে পারে তাকে বলতে দিন। যাদের গলায় বরশি লাগানো আছে তারা কথা বলবে না। আমিও বলিনি। ৬০ বছর আমি বলিনি। আজ আমার গলার থেকে আপনারাই বরশিটা খুলে নিয়েছেন। তাই আমি যতক্ষণ আছি, আপনি যতই বাধা দেন, আমি কথা বলতে চেষ্টা করবো। আবার আপনার আদেশ... আপনি যখন বন্ধ করে দেবেন। লালবাতি। আমি বসে পড়বো। ‍কিন্তু বিনীতভাবে বলবো আমাকে বলতে দিন। সময় নষ্ট হচ্ছে না। জাতির কত সময় নষ্ট হয়েছে। সময়ের কথা বলছেন। আমার জীবনের ১৪ বছর এ জাতির জন্য কারাগারে কেটেছে। আমার জীবন ও যৌবন। সুন্দরী সহধর্মিনীকে সঙ্গে নিয়ে ৭ বছর প্রবাসে কাটিয়েছি। মাননীয় স্পিকার, আপনার আজ সময়ের সংকট দেখা দিয়েছে। জাতি এখন সংকটে রয়েছে। এখানে বিদ্যুতের কথা বলা হয়েছে। আমি কাউকে বলবো না আপনি আমার এলাকায় আসুন। মন্ত্রী যেকোনও এলাকায় যাবেন, সেখানে বিদ্যুৎ যাবে না এটা ভালো করেই বোঝেন।

তিনি বলেন, আমার বক্তৃতায় যদি ফিরে আসতে দেন, না হলে বসে পড়ি। তিনি স্পিকারকে উদ্দেশ করে বলেন, মাননীয় স্পিকার বসে পড়বো? এসময় স্পিকার কোনও প্রতুত্তর না দিলে লতিফ সিদ্দিকী আবারও বলে ওঠেন, আপনি নীরব হয়ে গেলেন আমিও নীরব হয়ে যাই। আমি কিন্তু ওই চেয়ারটিকে (স্পিকার) সম্মান করি।.. এ সময় ডেপুটি স্পিকার তাকে বসতে বললে তিনি ‘আলহামদুল্লিাহ’ বলে বসে পড়েন।

People are also reading