হোম পিছনে ফিরে যান

সরকারি ১০ প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের রেশনের চাল ও গমের দাম বাড়ছে ৮ গুণ

newspostbd.com 4 দিন আগে
সরকারি ১০ প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের রেশনের চাল ও গমের দাম বাড়ছে ৮ গুণ

সেলিনা আক্তার:

সরকারি ১০টি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের দেওয়া রেশনের চাল ও গমের মূল্য নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। এত দিন সরকার রেশনের চাল ১ টাকা ৫০ পয়সা ও গম ১ টাকা ২০ পয়সা কেজি দরে বিক্রি করে আসছিল এবং এটা ছিল নির্ধারিত (ফিক্সড)। আগামী ১ জুলাই সোমবার থেকে নতুন দাম হবে চাল ১১ টাকা ২০ পয়সা ও গম ৯ টাকা ২০ পয়সা কেজি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমান দর নির্ধারিত হয়েছিল ১৯৯১ সালে অর্থাৎ ৩৩ বছর আগে।

অর্থ বিভাগ ২৪ জুন ‘প্রাধিকারপ্রাপ্ত ১০টি প্রতিষ্ঠানের জনবলের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে রেশনসামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে চাল ও গমের বিক্রয় মূল্য পুনর্র্নিধারণ’ শীর্ষক একটি পরিপত্র জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ১০টি প্রতিষ্ঠানের রেশন পাওয়া চাকরিজীবীদের কাছে চাল ও গমের বিক্রয় মূল্য হবে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চাল ও গমের নির্ধারিত অর্থনৈতিক মূল্যের ২০ শতাংশ। বিভাগটি বলেছে, ‘অর্থ বিভাগ থেকে প্রতি অর্থবছরের শুরুতে চাল ও গমের অর্থনৈতিক মূল্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

তবে অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, ইতিমধ্যে প্রতি কেজি চালের অর্থনৈতিক মূল্য ৫৬ টাকা ৩৮ পয়সা এবং প্রতি কেজি গমের অর্থনৈতিক মূল্য ৪৬ টাকা ১ পয়সা করা হয়েছে। এই দামের ২০ শতাংশ হিসেবে রেশনের চাল ১১ টাকা ২০ পয়সা এবং গম ৯ টাকা ২০ পয়সা কেজি দরে বিক্রি হবে। অর্থাৎ সরকারের প্রাধিকারপ্রাপ্ত ১০ প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের এখনকার চেয়ে প্রায় ৮-৯ গুণ বেশি দামে রেশনের চাল ও গম কিনতে হবে। তবে মূল্যবৃদ্ধির পরও তাঁরা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে রেশনের চাল ও গম পাবেন।

চার সদস্যের একটি পরিবার চাল ও গম মিলিয়ে পায় ৬০ কেজির বেশি। এ ছাড়া ভোজ্যতেল,চিনি ও মসুর ডাল পেয়ে থাকেন তাঁরা; কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান রেশনে চা-ও বিক্রি করে।

উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়েছেন সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ। তিনি ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে দুই বছর অর্থসচিব ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। এত কমে রেশন দেওয়াটা উচিত নয়। আমি অর্থসচিব থাকতে এ ব্যাপারে একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম; কিন্তু শেষ পর্যন্ত কার্যকর করতে পারিনি।’

অর্থ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী রেশনের চাল ও গম বিক্রি করা হবে ১০টি প্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের জনবলের কাছে। এগুলোকে ‘বিশেষ জরুরি হিসেবে প্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (এনএসআই), সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ (সেনা, নৌ ও বিমান), বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা অধিদপ্তর, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), কারা অধিদপ্তর, বেসরকারি প্রতিরক্ষা, অগ্নিনির্বাপণ অধিদপ্তর এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

নতুন অর্থবছর শুরু হবে আগামী ১ জুলাই। ওই দিন থেকেই চাল ও গমের নতুন দর কার্যকর হবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচি চলমান। আইএমএফের দিক থেকে ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ আছে। সরকারেরও চেষ্টা রয়েছে ভর্তুকি কমানোর। কোন প্রতিষ্ঠানের কতজন রেশন পাচ্ছেন, তার একটি পরিসংখ্যানও তৈরি করেছে অর্থ বিভাগ। এক কর্মকর্তা জানান, মোট ১০ প্রতিষ্ঠানের জনবল ১০ লাখের বেশি। তবে নতুন সিদ্ধান্তে কত টাকা সাশ্রয় হবে, সেই হিসাব এখনো করা হয়নি।

সূত্রগুলো জানায়, প্রাধিকারপ্রাপ্ত ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনবল আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা অধিদপ্তরের আওতায়। ২০২৪ সালের জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী দেশে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ৫ লাখ ১৭ হাজারের বেশি। ২০২৩ সালের গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী দেশে সেনাবাহিনীতে ১ লাখ ৭৫ হাজার, নৌবাহিনীতে ৩০ হাজার এবং বিমানবাহিনীতে ২১ হাজার সদস্য রয়েছেন।

এর বাইরে দেশে পুলিশ সদস্য রয়েছেন দুই লাখের বেশি। ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী বিজিবির সদস্য ৩৪ হাজার ৫৩০ জন। এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিরক্ষা এবং অগ্নিনির্বাপণ অধিদপ্তরে প্রায় ১১ হাজার, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) ২ হাজারের বেশি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে এক হাজারের বেশি জনবল রয়েছে। এসএসএফ, এনএসআই ও কারা অধিদপ্তরের সদস্য সংখ্যা জানা যায়নি।

রেশনের চাল ও গমের দাম পুনর্র্নিধারণে অর্থ বিভাগের সিদ্ধান্তটিকে কীভাবে দেখছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় উদ্যোগটি ঠিকই আছে। অনেক বছর একই দর ছিল, যতদূর সম্ভব এখন যৌক্তিক হলো। এ সিদ্ধান্ত সরকারের সার্বিক ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি বাবদ ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ আছে।

People are also reading