হোম পিছনে ফিরে যান

ভ্যাট অব্যাহতি সবচেয়ে বেশি খাদ্যপণ্যে, কম শিক্ষায়

jagonews24.com 2 দিন আগে
ভ্যাট অব্যাহতি সবচেয়ে বেশি খাদ্যপণ্যে, কম শিক্ষায়

নাগরিকদের স্বস্তি দিতে ও শিল্পায়নের সুবিধার্থে পণ্য এবং সেবায় মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট অব্যাহতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০২২ সালে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় প্রায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৭০ কোটি টাকার ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি ও খাদ্যখাত পেয়েছে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট অব্যাহতি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশি অব্যাহতি পেলেও এর প্রভাব পড়েনি বাজারে।

প্রথমবারের মতো প্রকাশিত এনবিআরের ‘বাংলাদেশ ভ্যাট ব্যয় প্রতিবেদন ২০২৩-২৪’ অনুযায়ী, ২০২২ সালে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ২৫ শতাংশের সমান ভ্যাট অব্যাহতি পেয়ে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে কৃষি কার্যক্রমসহ খাদ্য ও পানীয় খাত। এরপর রয়েছে পোশাক ও পাদুকা খাত শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ, আবাসন খাত শূন্য দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং চিকিৎসাব্যয় শূন্য দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। সবচেয়ে কম ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা পেয়েছে শিক্ষাখাত, যা জিডিপির মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। অন্যদিকে গৃহস্থালি পণ্যে কোনো ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘কৃষিপণ্য যেমন ধান, চাল, শস্য, সবজি, মাছ, মাংসে কোনো ভ্যাট নেই। এই ভ্যাট অব্যাহতির প্রভাব কিছুটা হলেও বাজারে রয়েছে। বাজারে এখনো অনেক খাদ্যপণ্যের দাম প্রতিবেশী দেশের তুলনায় কম। নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে বাজারে স্বস্তি ফেরাতে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে।’

আরও পড়ুন

এনবিআরের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক সংস্থা কাজ করছে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও জোগানের তুলনায় চাহিদা বাড়ার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে পারে।’

‘বাজারের লাগাম টানতে বিভিন্ন সময়ে ভোগ্যপণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে কর সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। তবে নানান উদ্যোগেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি’-সিপিডি

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, দেশে গত পাঁচ বছরে শুধু ভোগ্যপণ্যের দাম ৩১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। চাল, চিনি, সয়াবিন তেল ও গরুর মাংসের দাম বিশ্ববাজারের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি। বাজারের লাগাম টানতে বিভিন্ন সময়ে ভোগ্যপণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে কর সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। তবে নানান উদ্যোগেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।

গত রমজানের আগে চাল, তেল, খেজুর, চিনিতে শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি দেয় এনবিআর। যদিও রমজানে উচ্চমূল্যে এই পণ্যগুলো কিনে খেতে হয়েছে ভোক্তাদের। এক্ষেত্রে দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীরা দেখিয়েছেন একাধিক অজুহাত। যার মধ্যে রয়েছে অপর্যাপ্ত ভ্যাট অব্যাহতি, অব্যাহতির আগেই আমদানি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রচেষ্টা থাকে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুতদারের কারণে সরকারি উদ্যোগের সুফল পায় না জনগণ। এফবিসিসিআই অসাধু কোনো ব্যবসায়ীর পক্ষে নেই।’

খাদ্য ছাড়াও স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আরও কিছু খাত ভ্যাট অব্যাহতি বা হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট দেওয়ার সুবিধা পায়। যদিও শিক্ষাখাতে ভ্যাট অব্যাহতি বাড়ানোর দাবি সংশ্লিষ্টদের।

‘বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রচেষ্টা থাকে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুতদারের কারণে সরকারি উদ্যোগের সুফল পায় না জনগণ। এফবিসিসিআই অসাধু কোনো ব্যবসায়ীর পক্ষে নেই’- মো. আমিন হেলালী, সিনিয়র সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুদ্দিন মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটি মার্কার কলমের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। অথচ এটি দু- একদিনের বেশি ব্যবহার করা যায় না। তেমনি বইসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণের দামও অনেক বেশি। এ খাতে সরকারের আরও সুবিধা দেওয়া দরকার।’

২০২২ সালে ভ্যাট অব্যাহতি কমেছে ১৭ শতাংশ

এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছে এনবিআর, যা ২০২১ সালে ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ছাড়ের পরিমাণ কমেছে ১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধীরে ধীরে কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে এনবিআর। ছাড় না থাকলে কর আদায় এবং পরে কর ও জিডিপি অনুপাত বাড়বে। যেসব খাত বছরের পর বছর ধরে কর সুবিধা ভোগ করে আসছে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, সরকার তাদের চিহ্নিত করতে চাইছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ রয়েছে।

আরও পড়ুন

সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘এ ধরনের অব্যাহতি রাজস্ব আদায় কম হওয়ার একটি বড় কারণ। তবে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলোতে অব্যাহতি থাকা প্রয়োজন। কারণ এগুলো সরাসরি নিম্ন আয়ের মানুষদের প্রভাবিত করে।’ ভ্যাট অব্যাহতি হ্রাসে এনবিআরের পরিকল্পনা ও ভ্যাট ফাঁকি রোধে সুশাসন প্রয়োজন বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

‘নানান অজুহাতে সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। আমদানি করা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে এটি বেশি হচ্ছে’- গোলাম রহমান, সভাপতি, ক্যাব

এনবিআরের প্রতিবেদনে ভ্যাট অব্যাহতির উন্নতির ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ছয়টি সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- যোগ্যতার মানদণ্ড নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা, বিতরণমূলক প্রভাব মূল্যায়ন, পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন, ভ্যাট অব্যাহতির প্রভাব মূল্যায়ন, কারা ভ্যাট অব্যাহতির আওতায় আসতে পারে সেই পর্যবেক্ষণ এবং সব খাতে ভ্যাট অব্যাহতি র‌্যাশনালাইজ করা।

এদিকে ভ্যাট অব্যাহতিসহ নানান সরকারি উদ্যোগ থাকলেও সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে আসছে না বলে জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘নানান অজুহাতে সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। আমদানি করা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে এটি বেশি হচ্ছে।’

People are also reading