হোম পিছনে ফিরে যান

দুদকের জালে ফেঁসে যাচ্ছেন বিআইডব্লিউটিএ’র সুলতান

dailyvorerpata.com 2024/10/5

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান, পুলিশের সাবেক আইজি বেনজির আহমেদের পর এবার আলোচনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ‘বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) সুলতান আহমেদ খানের নাম। অভিযোগ উঠেছেন, এই কর্মকর্তা চাকরি জীবনে তিনি নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। হয়েছেন শতকোটি টাকার মালিক।

দুদকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র ভোরের পাতাকে জানিয়েছেন, এই (সুলতান আহমেদ খান) কর্মকর্তা বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে বনে গেছেন। তাকে নিয়ে দুদক টিম অনুসন্ধান শুরু করেছেন। কিছুদিনের মধ্যে আমরা তার বিস্তারিত গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরবো।  

এদিকে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ বেনামি হলেও তার সত্যতা খতিয়ে দেখতে সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু নিজেরা সৎ থাকলেই হবে না; মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সংস্থাগুলোতে কী হচ্ছে, তার দায়িত্বও নিতে হবে। কঠোর নজরদারি করতে হবে। কারও অনিয়ম ও দুর্নীতি পাওয়া গেলে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন মানুষ মনে করে সরকার দুর্নীতি নির্মূল করতে চায়। সচিবালয়ে গত বৃহস্পতিবার সচিব সভায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের এমন সব নির্দেশনাই দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। 

তিনি বলেন, দ্রুত ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা যুগোপযোগী করে নতুন বিধিমালা এবং ২০১২ সালের শুদ্ধাচার নীতিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। মাহবুব হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা শুদ্ধাচার বিষয়ে কিছু আলোচনা করেছি, বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করেছি এবং নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে আলোচনা করেছি। কিছু দাপ্তরিক কাজে প্রধানমন্ত্রী সময়ে সময়ে যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছিলেন, সেগুলো যাতে যত্নসহকারে গুরুত্ব দিয়ে অনুসরণ করা হয়, সে ব্যাপারে তাদের (সচিব) পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

সভায় বলা হয়, আর্থিক সাশ্রয়ের জন্য প্রকল্পের প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই) ও ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপট্যান্স টেস্টের (এফএটি) জন্য বিদেশযাত্রা বন্ধ করতে হবে। জনবান্ধব ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ছাড়া অন্য প্রকল্পের বিষয়ে ধীরে চলো নীতিতে চলতে হবে। চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেট ও সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অত্যন্ত দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে বলেছেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সচিবের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ব্হৃস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সচিব সভা শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে। অন্তত ৭০ জন সচিব বৈঠকে অংশ নেন। 

অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, এখন প্রতিটিস্তর ও বিভাগে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করার পালা। এতে ‘তাসের ঘরের’ মতো ‘তছনছ’ হয়ে যাবে দুর্নীতির দুষ্টচক্র। তাদের জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হলে সাঙ্গ হবে দুর্নীতিবাজদের বিলাসী জীবনযাপন। কিন্তু এসবের মধ্যেও এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ধরাকে সরা জ্ঞান করে দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেই চলছে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ, সম্পদ ও উৎপাদিত পন্য এবং বিশেষ করে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স যে দেশকে টিকিয়ে রেখেছে; তথাকথিত ভদ্রবেশী ‘শিক্ষিত’ আমলা, দুর্নীতিবাজ ব্যাংকার, কালোবাজারী ও চোরা কারবারী চক্র ও এক শ্রেণীর লুটেরা ব্যবসায়ীরা সব কিছু লুটে নিয়ে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করছে। তারা বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হলে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। সরকারের যেসব দপ্তর অধিদপ্তরে বেশুমার দুর্নীতিতে নিমজ্জিত তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ। এই দপ্তরের পরতে পরতে রয়েছে রহস্যময় দুর্নীতি। এখানকার কথিত ডাকসাইটে অসাধু কর্মকর্তাদের প্রায় সকলেই জ্ঞাত আয় বহির্ভূত কোটি কোটি টাকার মালিক। অনেকের নামে বেনামে দেশে ও দেশের বাইরে রয়েছে বেশুমার সম্পদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ড্রেজিং বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা ভোরের পাতাকে জানিয়েছেন, এই কর্মকর্তা অনেক দুষ্টু। তিনি এখন যেই চেয়ারে বসে আছেন সেটাও ক্ষমতার অপব্যবহার করে। তাকে বিআইডব্লিউটিএ ভবনে সবাই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবেই জানে। তার গ্রামে খোঁজ-খবর নিলে জানতে পারবেন তিনি কত বড় মাপের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা।

তারা আরো জানান, অফিসিয়ালি একটি কাজের বিষয়ে সম্প্রতিকালে ‘চিলমারী প্রজেক্টের’ পিডি মোহাম্মদ সফিউল্লাহকে অস্ত্রের মুখে ফেলে তাকে লাঞ্ছিত করেছেন। পরে সেই কর্মকর্তা দেশ থেকে বিদেশে চলে গেছেন  তার ভয়ে। 

এই বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ খানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

এই বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা ভোরের পাতাকে বলেন, আমি যতদূর জানি তিনি ভালো মানুষ। তাকে যে প্রজেক্ট দেওয়া হয়েছে তিনি সেটা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

People are also reading