হোম পিছনে ফিরে যান

সর্বজনীন পেনশনে সাড়ে ১০ মাসে জমা ১০০ কোটি

bbarta24.net 3 দিন আগে

সরকার ঘোষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে (স্কিম) মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কার্যক্রম শুরুর সাড়ে ১০ মাসে চার স্কিমে নিবন্ধন সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে। যার মাধ্যমে সরকারি ফান্ডে জমা পড়েছে ১০০ কোটি টাকা। তবে, এই স্কিমের আওতায় নিবন্ধিত সংখ্যার বেশিরভাগই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষ।

৩ জুলাই, বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে, সাড়ে নয় মাসে বিভিন্ন স্কিমে যুক্ত হওয়ার সংখ্যা লাখ স্পর্শ করে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতায় বর্তমানে মোট নিবন্ধনকারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ এবং মোট জমার পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি। ইতোমধ্যে জমাকৃত অর্থের মধ্যে ৯২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

চাঁদা জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্নকারীদের ৭৬ শতাংশই দরিদ্র, যাদের বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। সেই তুলনায় মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তরা তেমন আসছেন না এই পেনশনের আওতায়। আর স্কিমে এখন পর্যন্ত বেশি চাঁদা জমা দিয়েছেন বেসরকারি চাকরিজীবীরা।

সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে গত বছরের ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন। এর পরপরই আবেদন শুরু হয়।

প্রাথমিকভাবে প্রবাস স্কিম, প্রগতি স্কিম, সুরক্ষা স্কিম ও সমতা স্কিম- এই চার স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করেছে সরকার। চালুর প্রথম দিন থেকেই সাড়া মিলতে শুরু করে, ক্রমাগত যা ঊর্ধ্বমুখী।

পরবর্তীসময়ে সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামে নতুন স্কিম চালু করার ঘোষণা দেয়া হয়। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে এ স্কিম কার্যকর হয়েছে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর ১০ মাসে স্কিমের চার স্কিমে নিবন্ধন সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে। আর এতে জমা পড়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। তবে এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে যারা নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা জমা দিয়েছেন তাদের সিংহভাগ দরিদ্র মানুষ।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের চার স্কিমের মধ্যে সমতা স্কিমে নিবন্ধন সংখ্যার পরিমাণ দ্রুত বেড়েছে।

এ ব্যাপারে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা জানান, লোকাল প্রশাসনের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে বলেই নিবন্ধনের সংখ্যা বাড়ছে। মানুষ বুঝতে পারছে ৫০০ টাকা দিলে সরকার আরো ৫০০ টাকা দেবে, এতে ভবিষ্যৎ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। মানুষ বুঝতে পারছে বলেই করছে।

তিনি বলেন, যারা সমতায় আসবেন, তাদের জন্য চাঁদার হার একটাই। আর মেয়াদ শেষে যে পেনশন পাবেন, তা যিনি ওয়েল-অফ তার জন্য মানানসই না। এখন নিজের বুঝ তো পাগলেও বোঝে। যে ওয়েল-অফ সে চিন্তা করবে আমি যে ১০ বছর বা ২০ বছর জমাবো, যখন আমি পেনশন পাবো তখন কি এটা আমার জীবনযাত্রার সঙ্গে যায়? তারপর তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, পেনশন স্কিমের সবচেয়ে বড় জিনিস এটা ম্যানেজ করা, কার্যকর করা। যাদের জন্য যে স্কিম তারা সেই স্কিমে নিবন্ধন করছেন কি না, সেটি ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা উচিত।

পেনশন বিধিমালা বলছে, সর্বজনীন পেনশন প্রথায় যার যত টাকা জমা, মেয়াদ শেষে তার তত বেশি পেনশন। অন্যদিকে, স্বল্প আয়ের মানুষদেরও বিমুখ করবে না এ উদ্যোগ। যারা মাসিক ৫০০ টাকা জমাবেন, তাদের জন্য শুরু থেকেই থাকবে সরকারের আরও ৫০০ টাকার ভর্তুকি। সবমিলিয়ে, সবার জন্যই থাকছে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে বাড়তি কয়েক গুণ মুনাফা।

আর পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন। এছাড়া মাসিক পেনশনবাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অন্যদিকে, চলতি বছরির জুলাই বা তার পরবর্তী সময়ে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যোগদান করবেন, তাদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। তারা সবাই ‘প্রত্যয়’ স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হবেন। গত ২০ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন ইস্যু করেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ কর্তৃক ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ পাস করা হয়। বহুল প্রতীক্ষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) ওই বছরের ১৭ আগস্ট সকালে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উল্লেখ্য, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দিয়ে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে পেনশনারের নমিনি পেনশন স্কিম গ্রহণকারীর ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন পাবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেয়ার আগেই মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তা নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে। চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেবল তার জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে উত্তোলন করা যাবে।

বিবার্তা/লিমন

People are also reading