হোম পিছনে ফিরে যান

লামায় যৌতুকের দাবিতে নির্যাতিত ৪ সন্তানের জননী

bbarta24.net 3 দিন আগে

বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে হাছিনা আক্তার (৩৪) নামের ৪ সন্তানের এক জননীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, নির্যাতনের পর সন্তানসহ ওই নারীকে ঘর থেকে বেরও করে দেন যৌতুক লোভী পাষণ্ড স্বামী শামসু আলম (৩৬)। বর্তমানে ৪ সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন নির্যাতিতা হাছিনা আক্তার।

উপজেলার সরই ইউনিয়নের ছালাম মেম্বার পাড়ায় এ অমানবিক ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় নির্যাতিতা হাছিনা আক্তার প্রতিকার চেয়ে স্বামী শামসু আলমসহ ২ জনের বিরুদ্ধে উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী অভিযোগ করেছেন (সি.আর মামলা নং ১৮৭/২৪)।

অভিযুক্ত শামসু আলম সরই ইউনিয়নের ছালাম মেম্বার পাড়ার বাসিন্দা আব্দু ছালামের ছেলে।

অভিযোগে জানা যায়, ১৬ বছর আগে শামসু আলম হাছিনা আক্তারকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর হাছিনা আক্তারের ঘরে ৪ সন্তানের জন্ম হয়। গত ২-৩ বছর ধরে শামসু আলম পাশের হাবিবুর রহমান পাড়ার বাসিন্দা বাদশা মিয়ার ছেলে আব্দুল আলমের প্ররোচনায় বিভিন্ন অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। এ ধারাবাহিকতায় আব্দুল আলমের ইন্দনে শামসু আলম স্ত্রী হাছিনা আক্তারের কাছে ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করেন। বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা এনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে হাছিনা আক্তারকে স্বামী শামসু আলম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন।

এক পর্যায়ে যৌতুকের টাকা না দেয়ায় স্বামী শামসু আলম স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন। সন্তানদের দিকে তাকিয়ে স্বামীর নির্যাতন সহ্য করে হাছিনা আক্তার দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালান। এক পর্যায়ে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলে হাছিনা আক্তার ৪ সন্তানের কথা চিন্তা করে বাবার নামীয় জমি বিক্রি করে ৩ লাখ টাকা এনে দেন। এতেও ক্ষান্ত হয়নি স্বামী শামসু আলম। যৌতুকের বাকি ২ লাখ টাকা এনে দেয়ার জন্য হাছিনা আক্তারকে শারীরিক ও মানসিক চাপ প্রয়োগ করেন। হাছিনা আক্তার আর কোন টাকা দিতে পারবেনা বলে জানালে, স্বামী শামসু আলম হাছিনা আক্তারকে তালাক দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করবেন বলে হুমকিসহ মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেন এবং অন্য একটি মেয়েকে আত্মীয় পরিচয়ে ঘরে তুলেন।

এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ৪ সন্তানসহ হাছিনা আক্তারকে প্রাণে হত্যা করবে বলে শামসু আলম হুমকি প্রদান করেন। বর্তমানে শামসু আলম হাছিনা আক্তার ও তার সন্তানদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে অন্য একটি মেয়ের সাথে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। শেষে অমানবিক নির্যাতন সইতে না পেরে হাছিনা আক্তার প্রতিকার চেয়ে স্বামী শামসু আলম ও আব্দুল আলমের বিরুদ্ধে উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী অভিযোগ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রী হাছিনা আক্তারের কণ্ঠ নকল করে অন্য এক নারীর মোবাইল ফোনালাপ রেকর্ড করে বিভিন্ন জনকে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিভ্রান্তির চেষ্টা ও হাছিনা আক্তারের মানহানীসহ ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন স্বামী শামসু আলম।

৫ জুলাই, শুক্রবার সকালে নির্যাতিত হাছিনা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যৌতুক দাবি ও নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা করলে স্বামী শামসু আলম নিজেকে রক্ষা করতে অন্য এক নারী দ্বারা আমার কণ্ঠ নকল করে আমাকে বিভিন্নভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। স্বামীর এসবের প্রতিবাদ করলে হাছিনা আক্তারকে চার সন্তানকে ঘর থেকে বের করে দেন। বর্তমানে খেয়ে, না খেয়ে ৪ সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন হাছিনা আক্তার।

এদিকে মেয়ে ও ৪ নাতি নাতনীর কথা চিন্তা করে জমি বিক্রি করে নগদ ৩ লাখ টাকা মেয়ের জামাই শামসু আলমকে দেন বলে জানিয়েছেন নির্যাতিত হাছিনা আক্তারের বাবা আবদুল মালেক।

তিনি বলেন, বাকি ২ লাখ টাকা না দেয়ায় শামসু আলম আমার মেয়ে ও নাতি-নাতনীদের ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।

তবে সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে অভিযুক্ত শামসু আলম বলেন, বরং হাছিনা আক্তার আমাকে মারার জন্য মানুষ ঠিক করেছেন বলে প্রমাণ আছে।

এ বিষয়ে সরই ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. বাবুল মিয়া ও খালেদা বেগম জানান, যৌতুকের জন্য শামসু আলম তার স্ত্রী হাছিনা আক্তারকে নির্যাতন করে ৪ সন্তানসহ ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন বলে শুনেছি। আগে একাধিকবার সামাজিকভাবে বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু শামসু মিয়া কারো কথা মানেন না। তাই নির্যাতিতা হাছিনা আক্তারকে আদালতের আশ্রয় নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। পরে হাছিনা আক্তার উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন বলে শুনেছি।

বিবার্তা/আরমান/লিমন

People are also reading