হোম পিছনে ফিরে যান

ধামরাইয়ে রাসেল’স ভাইপার আতঙ্ক: মারা পড়ছে অন্য প্রজাতির সাপ

risingbd.com 2024/7/5
ধামরাইয়ে রাসেল’স ভাইপার আতঙ্ক: মারা পড়ছে অন্য প্রজাতির সাপ
নির্বিষ দাঁড়াস সাপ

ঢাকার ধামরাইয়ে রাসেল’স ভাইপার সাপের ভীতির কারণে সাদারণ মানুষের হাতে ব্যাপকভাবে অন্য প্রজাতির সাপ মারা পড়ছে। গত ১০ দিনে অর্ধ শতাধিক সাপ পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। 

Google news

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পিটিয়ে মারা সাপের বেশিরভাগই নির্বিষ। আর ধামরাইয়ে রাসেল’স ভাইপার দেখা যাওয়ার তথ্যগুলোও গুজব।

রাসেল’স ভাইপার মারার গুজব

গত ১৬ জুন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি খবরে দাবি করা হয়, ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের জালসা গ্রামে স্থানীয়রা একটি রাসেল’স ভাইপার সাপ পিটিয়ে মেরেছেন। খবরটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে।

ফেসবুকে এভাবে ছড়িয়ে পড়েছে গুজব

বিষয়টি নিয়ে জানতে ওই এলাকায় গেলে কে বা কারা ওই সাপ মেরেছেন, সে বিষয়ে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারেননি। 

ওই গ্রামের বাসিন্দা এবং ইউপি সদস্য সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘জালসা গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় সাপটি মারা হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, সেটি রাসেল’স ভাইপার নয়। এই তথ্যটি গুজব।’

দুই দিন পর আবার একইভাবে ফেসবুকে খবর ছড়ায় উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নের গোয়ালদী গ্রামে রাসেল’স ভাইপার সাপ পিটিয়ে মারা হয়েছে। তবে ওই এলাকায় গিয়েও এমন তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

সোমভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন বলেন, ‘ওই ঘটনার কোনো সত্যতা নেই। এটি সম্পূর্ণ গুজব।’

এদিকে, এসব খবরের মধ্যেই গত ২০ জুন উপজেলার আমতা ইউনিয়নের কাঁচা রাজাপুর গ্রামে তহিরন নেছা (৬৫) নামে এক বৃদ্ধা সাপের কামড়ে মারা যান। খবর ছড়ায় ওই বৃদ্ধা রাসেল’স ভাইপার সাপের কামড়ে মারা গেছেন। 

তবে আমতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন বলেন, ‘বাড়িতে কাজ করার সময় তহিরন নেছাকে সাপে কামড় দেয়। তবে কোন সাপ তাকে কামড় দিয়েছিল তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

মারা পড়ছে নির্বিষ সাপ

গত ২৩ জুন সানোড়া ইউনিয়নের সানোড়া খালপাড় এলাকায় বাচ্চা ও মা সাপসহ আরও ২৩টি সাপ পিটিয়ে মারা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেগুলো ছিল নির্বিষ দাঁড়াস সাপ।

একইভাবে ধামরাই সদর ইউনিয়নের শরিফবাগ এলাকায় রাসেল’স ভাইপার গুজবে পিটিয়ে মারা হয় নির্বিষ প্রকৃতির একটি মা দাঁড়াস সাপসহ মোট ২৯টি সাপ।

এছাড়াও উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া এলাকায়ও রাসেল’স ভাইপার গুজবে একটি দাঁড়াস সাপ পিটিয়ে মারা হয়। পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড লাকুড়িয়া পাড়া এলাকায় মারা হয় একটি গোখরা সাপ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘সব সাপেরই প্রকৃতিতে বড় ভূমিকা রয়েছে। প্রায় সব সাপের প্রধান খাবার ইঁদুর। ফলে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে সাপের ভূমিকা রয়েছে। আর রাসেল’স ভাইপার নিয়ে যা হচ্ছে, তা অতিরঞ্জিত। কিছুটা হয়তো বেড়েছে। কিন্তু যেমন প্রচার হচ্ছে তেমন নয়। সাপ আগেও ছিল, এখনও আছে। এভাবে সাপ নিধন সঠিক নয়। সাপ রক্ষায় মানুষকে গুরুত্ব বুঝিয়ে সচেতন করতে হবে। যে কোনো প্রাণি মেরে ফেলা বে-আইনি, আইনের পরিপন্থী। রাসেল’স ভাইপার সম্পর্কে যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে এই ভুল তথ্য থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে।’

প্রয়োজন নজরদারি

প্রকৃতির জন্য প্রয়োজনীয় সাপ রক্ষায় সচেতনতার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা। এ বিষয়ে সচেতনতা চালানো হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসনও।

সচেতন নাগরিক সমাজ ধামরাইয়ের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি প্রাণি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে জেনে না জেনে নির্বিচারে সাপ পিটিয়ে মারা হলে সেটি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করবে। যারা বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনের দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের উচিত জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।’

ধামরাই উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. মোতালিব আল মোমিন বলেন, ‘সাপ নিধন বন্ধে বন বিভাগ যথেষ্ট তৎপর। ইউএনওসহ উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছে সাপ নিধন বন্ধের জন্য। আর যেসব সাপ মারা হচ্ছে, এগুলো বিষধর নয়, নির্বিষ সাপ মারা হচ্ছে। এই সাপ মারার মধ্য দিয়ে পরিবেশের মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। ধামরাই-আশুলিয়ায় রাসেল’স ভাইপার দেখা যায়নি। এটি যদি দেখাও যায়, তাহলে আমাদের বণ্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটে যে রেসকিউ দল রয়েছে তাদের হটলাইনে খবর দিলে তারা এসে সাপ উদ্ধার করবে। মানুষ যেন সাপের বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়, তাদের সচেতন করতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।’

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খান মো. আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, ‘এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে।’

People are also reading