হোম পিছনে ফিরে যান

নতুন সম্ভাবনার বে টার্মিনাল হবে বাংলাদেশের গেম চেঞ্জার

suprobhat.com 6 দিন আগে
বে টার্মিনালের লে আউট।

ডেস্ক রিপোর্ট »

চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প বে টার্মিনাল। বিশ্বব্যাংকের সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন ‘বে টার্মিনাল’ প্রকল্পে গতি নিয়ে এসেছে। প্রকল্পের ব্রেক ওয়াটার বা স্রোত প্রতিরোধক তৈরি এবং জাহাজ চলাচলের পথ তৈরি তথা খননকাজের জন্য মূলত এই অর্থ ব্যয় করা হবে।

বিশ্ব ব্যাংক বলছে বে টার্মিনাল প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য গেম চেঞ্জার হবে। এটি পরিবহন খরচ, সময় কমিয়ে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াবে। বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার বাজার খুলবে।

চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণের অংশ হিসেবেই বন্দর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা ও হালিশহর সমুদ্র উপকূলভাগের বিস্তীর্ণ ভূমি ও সাগর ঘেঁষে হচ্ছে বে-টার্মিনাল। এর পূর্ব পাশে আউটার রিং রোড এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের খেজুরতলার বিপরীত থেকে কাট্টলী পর্যন্ত অংশে পলি জমে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চর হয়েছে। এই চরকে কেন্দ্র করেই হচ্ছে বে-টার্মিনাল।

প্রকল্পএলাকাটি লম্বায় প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। বন্দর জলসীমার শেষ প্রান্তে চট্টগ্রাম ইপিজেডের পেছনের সাগরপার থেকে শুরু বে টার্মিনাল প্রকল্পের সীমানা, যার শেষ প্রান্ত রাসমণিঘাটে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ২০১৫ সালে পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকায় বে-টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়। যদিও এক দশকেও গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের অগ্রগতি ছিল খুব ধীর। বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতার কারণে গতি পাচ্ছে বে টার্মিনাল নির্মাণ।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বে টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ অনেক আগেই গতি পেয়েছে। এখন বিশ্বব্যাংকের ঋণ অনুমোদন গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে এসেছে। টার্মিনাল নির্মাণের আগে প্রথম কাজ হচ্ছে, ব্রেক ওয়াটার বা স্রোত প্রতিরোধক ও খননকাজ করে জাহাজ চলাচলের পথ তৈরি করা। বিশ্বব্যাংকের ঋণে এই কাজ হবে সবার আগে। সে জন্য ব্রেক ওয়াটার ও খননবিষয়ক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব সরকারের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদনের পর এই কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে।

জোয়ার ভাটার উপর নির্ভরতার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে সব সময় জাহাজ ভিড়তে পারে না। চ্যানেলের পানির গভীরতাও কম হওয়ায় সর্বোচ্চ ১০ মিটার গভীরতা এবং ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। বে-টার্মিনাল হলে বন্দরে জাহাজ ভিড়তে আর জোয়ার ভাটার অপেক্ষায় থাকতে হবেনা। এখানে চ্যানেলের গভীরতা বেশি হওয়ায় সর্বোচ্চ ১২ মিটার গভীরতা এবং ২৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে।

বে-টার্মিনাল প্রকল্পের আওতায় জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো নামানোর জন্য চারটি টার্মিনাল নির্মিত হবে। এর মধ্যে একটি মাল্টি পারপাস বা বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী টার্মিনাল। দুটি কনটেইনার টার্মিনাল ও চতুর্থটি হবে তেল ও গ্যাস খালাসের টার্মিনাল।

ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা এবং নৌ, রেল ও সড়কপথে সরাসরি সংযোগের কারণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তিন টার্মিনাল অপারেটর এই টার্মিনাল নির্মাণে ইতিমধ্যে চার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে প্রস্তুত। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হচ্ছে ।

এই টার্মিনালের জন্য ৫৬৭ একর জমি বুঝে পেয়েছে বন্দর। চলতি বছরেই এই টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরুর ব্যাপারে আশাবাদী বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিশ্বের শীর্ষ টার্মিনাল অপারেটররা নির্মাণ ও পরিচালনা করবে বে-টার্মিনাল। প্রস্তাবিত চারটি টার্মিনালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড দুটি কনটেইনার টার্মিনাল ও এডি পোর্টের অর্থায়নে বন্দর মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ করবে। একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ইস্ট কোস্ট গ্রুপ লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ করবে।

প্রস্তাবিত বে টার্মিনালে চার হাজার একক কনটেইনারবাহী জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। জাহাজও ভেড়ানো যাবে দিনরাত যেকোনো সময়।

বে টার্মিনাল প্রকল্প এলাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত আউটার রিং রোডের পাশে। কাছাকাছি রয়েছে রেললাইন। আবার অভ্যন্তরীণ নদীপথেও বে টার্মিনাল থেকে সরাসরি যাওয়া যাবে সারা দেশে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ২২০০-২৩০০ কনটেইনার ধারণক্ষমতার জাহাজ আসতে পারে। বে-টার্মিনালে ৫-৬ হাজার কনটেইনারবাহী জাহাজ আসতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে ৫-৬ গুণ বড় হবে এই বে-টার্মিনাল। ১০০ বছরের মধ্যে আর নতুন করে বন্দর বাড়ানোর চিন্তা করা লাগবে না। এটি চালু হলে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে ব্যবসার খরচ কমবে।

People are also reading