হোম পিছনে ফিরে যান

আলোকিত হবে চট্টগ্রামের সড়ক, ২১৪ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে ভারত

banglatribune.com 2024/10/5

চট্টগ্রাম নগরীকে ২৬০ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয়ে আলোকিত করা হবে। শনিবার (৬ জুলাই) রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউতে ‘মডার্নাইজেশন অব সিটি স্ট্রিট লাইট সিস্টেম অ্যাট ডিফারেন্ট এরিয়া আন্ডার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন’ শীর্ষক এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

প্রকল্পটির মাধ্যমে সড়কবাতি দিয়ে নগরীকে আলোকিত করা হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে সড়ক আলোকিত করতে এত বড় প্রকল্প আগে কখনও নেওয়া হয়নি। 

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি বাস্তবায়ন হলে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাফিক এবং পথচারীদের জন্য কার্যকর ও টেকসই সড়ক বাতির আলোক সুবিধা নিশ্চিত হবে। রাতে শহরের সৌন্দর্য, ব্যবসায়িক সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে কমবে কার্বন নির্গমন। এ ছাড়া শক্তি শোষণ সম্পর্কিত পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রাফিক ও পথচারীর জন্য রাস্তায় আলোর সুবিধা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে সড়কবাতির আলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

২০১৯ সালের ৯ জুলাই একনেক সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের ৪১ ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কজুড়ে এলইডি লাইট লাগানোর এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারত সরকার ঋণ দিচ্ছে ২১৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা এবং সরকারি তহবিল (জিওবি) থেকে দেওয়া হচ্ছে ৪৬ কোটি ৪৩ লাখ পাঁচ হাজার টাকা। এটি বাস্তবায়িত হলে সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিল কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। এ ছাড়া বাতিগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫০০টি সুইচের বদলে চারটি কেন্দ্রীয় সার্ভার স্টেশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তাতেও প্রায় ১২ লাখ টাকারও বেশি সাশ্রয় হবে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের মিয়াখান সওদাগর পোল থেকে ইসহাক সওদাগর পোল পর্যন্ত সড়কের একপাশে এলইডি লাইট স্থাপনের জন্য খুঁটি বসানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে চসিক।

জ্বালানি দক্ষতা উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ‘টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ এবং ভারতের ‘এনার্জি ইফিসিয়েন্সি সার্ভিস লিমিটেড (ইইসিএল)’র সঙ্গে ২০১৭ সালে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। এর প্রেক্ষিতেই প্রকল্পটি গ্রহণ করে চসিক। প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে এলওসি–৩ (লাইন অব ক্রেডিট) এর আওতায় ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ অর্থের জোগান দেবে ভারত। বাকি ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ দেবে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের এক্সিম ব্যাংক তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শর্ট লিস্ট পাঠায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ‘এনার্জি ইফিসিয়েন্সি সার্ভিসেস লিমিটেড’, ‘সিগনিফাই ইনোভেশন্স ইন্ডিয়া লিমিটেড’ এবং ‘শাপর্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’। শর্ট লিস্টের প্রতিষ্ঠানগুলোয় দরপত্রে অংশ নেয়। বাছাই শেষে ‘শাপার্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডকে’ চূড়ান্ত করা হয়। ২০২৬ সালের ৩০ জন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের আওতায় প্রতি ওয়ার্ডে আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার করে ২০৫ কিলোমিটার সড়কে আলোকায়নের কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রকল্পের ডিপিপি অনুযায়ী চসিক আওতাধীন নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ৫ ফুটের বেশি প্রশস্ততার ১০ কিলোমিটার সড়ক এলইডি বাতির আওতায় আসবে। বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এই বাতি পাঁচ বছর পর্যন্ত জিরো রক্ষণাবেক্ষণ খরচে চলবে। ওয়ার্ডগুলোতে ৪০, ৬০, ১০০ ও ২৫০ ওয়াটের ২০ হাজার ৬০০টি এলইডি বাতি, ২০ হাজার ২৬৭টি জিআই পোল এবং ৫০৭টি কন্ট্রোল সুইচ বক্স বসানো হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুৎ বিল কমে যাওয়াসহ বাতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয়ভাবে চারটি সার্ভার স্টেশন স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া হাইড্রোলিক বিম লিফটার ও ইলেকট্রিক্যাল ইক্যুপমেন্ট সংগ্রহ করা হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে ভারত। ভারতের সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসী আলোকিত হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে সহায়ক হবে এই প্রকল্প।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই-কমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে ছিল ভারত। বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতের ভূমিকার টোকেন অফ ফ্রেন্ডশিপ হিসেবে কাজ করবে এই প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধবভাবে চট্টগ্রামকে আলোকিত করা সম্ভব হবে।’  

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৬০ কিলোমিটার সড়কের আলোকায়ন হতে যাচ্ছে; যা পরিবেশবান্ধব, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী, টেকসই ও কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এটি বাস্তবায়নের পর চট্টগ্রামের কোনও অলি-গলি আলোর বাইরে থাকবে না।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, আবদুচ ছালাম এমপি, সিডিএর চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, ডিআইজি নূরে আলম মিনা, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার রাজীব রঞ্জন এবং ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ প্রমুখ।

People are also reading